অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক :
শরীর বেশ খারাপ লাগছিল। একদিন ফোন দিলাম এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য। এরা প্রথম ফোনে এপয়েন্টমেন্ট নেয় তারপর ডাক্তার আপনাকে ফোন দিয়ে প্রেসক্রিপশন দেয়। এরকম হচ্ছে সম্ভবত করোনা আসার পর।
ফোন দিলাম। দেখালো টেলিফোন লাইন বিজি। কয়েকবার দিয়ে লাইন পেলাম। প্রথমে কয়েক মিনিটের ভাষন শুনাইলো করোনা নিয়ে। যা অটোমেটিক সেট করা। তারপর এক-দুই চাইপা নির্দিষ্ট করে দিলাম যে আমার ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট লাগবে। আমি লাইনে ১১ নম্বরে স্থান পেলাম। ২-৩ মিনিট পর পর আমার সিরিয়াল এগাচ্ছিলো। প্রায় ২০ মিনিট পর একজন বলে হাউ ক্যান আই হেল্প উ? বললাম আমার শরীর চুলকায়, ঘুম কম হয়। সে আরো কিছু ডিটেইল নিয়ে বললো তোমাকে ডাক্তার ফোন দিবে। ততক্ষনের জন্য টা টা।
এপয়েন্টমেন্ট নিলাম সকালে। ডাক্তার সাব ফোন দিলো দুপুরের দিকে। দিয়ে বিস্তারিত জেনে নিয়ে বললো তোমার আগে রক্ত পরীক্ষা করা হবে। তারপর ট্রিটমেন্ট। বললাম খুবই উত্তম প্রস্তাব। যাক কিছু টাকা অন্তত উসুল হবে। তো কবে রক্ত পরীক্ষা জনাব। তিনি জানালেন তারা খুবই বিজি। তাই রক্ত পরীক্ষার তারিখ আগামী ১১ তারিখ। আজকে মার্চের ৩ তারিখ আর রক্ত পরীক্ষা ১১ তারিখ। বাহ! আসলেই উত্তম প্রস্তাব। যেহেতু আমি সিরিয়াস রোগি না তাই তাদের প্রস্তাবেই রাজি হলাম।
পরের দিন আবার ফোন দিলাম যে আমার ব্লাড প্রেশার ইদানিং হাই যাচ্ছে। গতকাল বাসায় মেপেছি দেখাচ্ছিলো ১৪০ এর উপর। শুনে তারা রোবটের মত আবার বললো ডাক্তার তোমাকে ফোন দিবে। এইবারও লাইন পেতে ১৫-২০ মিনিটের মতই লেগেছে। পরে ডাক্তার সাব ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানলো। বংশে কারো ব্লাড প্রেশার আছে কিনা, আমি ধুমপান করি কিনা, স্ট্রেস আছে কিনা, সপ্তাহে কত পেগ ওয়াইন খাই ইত্যাদি ইত্যাদি। সব কিছু নিয়ে বললো তুমি তোমার বাসায় আগামী ১১ তারিখ পর্যন্ত প্রেশার মাপবে এবং তা কাগজে লিখে রাখবে। রক্ত দেয়ার দিন তা সাথে করে নিয়ে আসবে।
১১ তারিখে রক্ত দেয়ার আগেই এসএমএস পাঠিয়েছে কোথায় যেতে হবে। বাসার পাশের জিপি (এদের জিপি মানেই ডাক্তারখানা) রেফার না করে দুরের একটা স্থানে যেতে বলেছে। সেখানে যেতে লাগলো আরো ৮ পাউন্ড। ভাবলাম বাহ ভালোই টাকা উসুল হচ্ছে। রক্তের সাথে তারা ইউরিনও নিয়েছে। রক্ত দিয়ে এসে ঔষধের জন্য ওয়েট করছি।
বিকালের দিকে ডাক্তার ফোন দিয়ে জানলো যে আমার প্রেসক্রিপশন কোন ফার্মিসিতে পাঠাবে। আমার বাসার ঠিকানা দিয়ে বললাম কাছের কোনটাতে পাঠাও।
তিনি আরো জানালেন তোমার যেহেতু হাই ব্লাড প্রেশার তাই আগামী ২৬ তারিখে আবার রক্ত নেয়া হবে।
আমি বললাম আজকে যে রক্ত নিয়েছো তাতেই তো কাজ হওয়ার কথা। আবার কেন? আর আমাকে শুধু ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোলের জন্য ঔষধ দিয়েছে। রক্তের রেজাল্ট পাওয়া যাবে ২-৩ দিন পর। তখন ডাক্তার আরো বিস্তারিত জানাবে।
পরের দিন ঔষধ নিতে গেলাম। ঔষধ দিয়েছে ১ টা। ২৮ দিনের জন্য ২৮ টা ট্যাবলেট। দাম ৯.১৬ পাউন্ড। বাংলাদেশে এই ঔষধ আমি নিশ্চিত পানির দামেই পাওয়া যাওয়ার কথা। আর এই এক ঔষধ নেয়ার জন্য এত লম্বা সময় ওয়েট করার কোন প্রয়োজন কি আছে? যে কোন ফার্মেসির দোকানদারও জানে হাই ব্লাড প্রেশারের ঔষধ কোনটা।
রক্তের রেজাল্ট এখনো পাইনি। আজকে ফোন দিয়ে জানলাম ডাক্তারের সাথে আমার এপয়েন্টমেন্ট ২১ এপ্রিল। আর আমার ইউরিনের রেজাল্ট আসছে রক্তের রেজাল্ট এখনো আসে নাই। শুনেই ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলো।
মেজাজ খারাপ করে বললাম মার্চের শুরুতে ফোন দিয়ে ডাক্তার পাবো ২১ এপ্রিল। বলেই ফেললাম তোমাদের দেশের এটা কোন ধরনের সিস্টেম। সে জানালো তোমার খুব জরুরি হলে তোমার জিপির সাথে আলাপ করো। বা বাই
মূল কথায় আসি। ভাবতেছিঢলাম আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কত ভালো কত পেসেন্ট ওরি
য়েন্টেড। যখন খুশি ডাক্তার দেখানো যায় যখন খুশি ঔষধ কেনা যায়। যেকোন টেস্টের রেজাল্ট অল্প সময়েই পাওয়া যায়। জরুরি বিভাগে ডাক্তার আসতে ৫ মিনিট দেরি হলে রোগির স্বজনরা যে উত্তেজনা দেখান তাদেরকে ২ মাসের ডেডলাইন দিলে কি লংকা কান্ডটাই না করতো। আর সরকারি হাসপাতালের কোন ডাক্তার যদি কোন রোগিকে বলে তোমার খুব জরুরি হলে অমুক জায়গায় যোগাযোগ করো তাহলে তার চাকরি কি থাকবে?