সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাৎকার
ডা. ফাহমিদা মাহবুবা :
ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে যারা অফিস-পড়াশোনা-ব্যবসা সামলায় তারা এক একজন “আয়রন লেডি “ আমার কাছে!
আর ডাক্তার মায়েরা যে কি কি সামলায় সেটা আমি বুঝি হাড়ে হাড়ে !
এজন্য প্রত্যেকটা ডাক্তার মা আমার চোখে এক একেকজন সুপার ওমেন !
অন্য যে কোন কর্মজীবি মেয়েদের স্ট্রাগলের তুলনায় ডাক্তার মায়েদের স্ট্রাগলটা বড্ড বেশি।
কারণ চাকরির পাশাপাশি তাকে নিজেকে আরো বেশি যোগ্য করতে বা নামের পাশে একটা পোষ্টগ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাগাতে সারাদিন হাড়ভাংগা খাটুনির পর রাতে এসে পড়তে বসতে হয়!
নাহলে খোদ ডাক্তার সমাজেই ঐ ডাক্তার মায়ের স্থান হয় পিছিয়ে পড়াদের দলে!!
সিম্পল এমবিবিএস শুনতে শুনতে কাটে জীবন ।
চাকরি..ট্রেনিং..পোষ্টগ্রাজুয়েশনের জন্য কোচিং ..সংসার..বাচ্চা..নির্ঘুম রাত..পরীক্ষা..চান্স না হওয়া..ডিপ্রেশন ..নিজেকে অপদার্থ মনে হওয়া.. আর সাথে ফ্রিতে একগাদা স্ট্রেস ...!!
এ যেন এক ভিসিয়াস সাইকেল!!
এগুলো ফেস করেন নাই এমন কোন ডাক্তার মা নেই এটা আমি হলফ করেই বলতে পারি।
এতকিছুর পর চান্স হলে তবুও কিছুটা তৃপ্তি..!
না হলে সেই ভিসিয়াস সাইকেলের আবারো পুনরাবৃত্তি !!
এটা তো গেল পড়াশোনার কথা !
এছাড়াও ডাক্তার মা কে ব্যক্তিগত..সামাজিক এবং চাকরি জীবনেও কিন্তু কথা কম শুনতে হয় না! পারিবারিক জীবনেও হতে হয় হেয় ।পদে পদে নিকট আত্নীয়ের কাছে কথা শুনতে হয় ।বাচ্চাকে টাইম দিতে গেলে ডিউটি অফ করতে হয় ..ডিউটি অফ করলে সেটা মেকআপ করতে জান শেষ ...কিন্তু ডিউটিই বা কয়দিন অফ রাখা যাবে? চাকরি তেই বা কয়দিন ছুটি নেয়া যাবে ?
সবকিছু ছেড়ে বাসায় বসে থাকলেও ডিপ্রেশন !! সাথে কাছের মানুষদের পিন মারা কথা ..ডাক্তারি পড়ে হাউজওয়াইফ হয়েছে !
২/১ দিন পরই মনে হবে এজন্যই কি এত কষ্ট করে ডাক্তরি পড়েছিলাম ?
আবারও ডিপ্রেশন !
মা বা শ্বাশুড়ির কাছে বাচ্চা রাখতে গেলে একটা সময় পরে তাঁরাও বিরক্ত হয়ে যান ।হেল্পিং হ্যান্ড আজ আছে তো কাল নেই । রাত পোহালেই চিন্তা বাচ্চা কে কার কাছে রাখব ?
একটা ভরসার হাত যে ভীষণ ভাবে জরুরী একজন লেডি ডক্টরের জন্য ! অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিভা হারিয়ে যায় শুধুমাত্র ভরসা করার মত একজন মানুষের অভাবে !
আবার যাদের বাচ্চা নাই বা বিয়ে হয় নাই তারা কি শান্তিতে আছেন মনে করেন ? মোটেও না । তাদের জীবনটাও তেজপাতা বানিয়ে ফেলেন মুখোশধারী কাছের মানুষ রা (!!)
বুড়া হয়ে যাচ্ছ বিয়ে করবে কবে ? কয়দিন পর তো বাচ্চাই হবে না এরকম হাজার টা প্রশ্নবানে বিদ্ধ করে প্রতিনিয়ত ।
ফলশ্রুতিতে প্রত্যেক টা ডাক্তার মেয়ে কম বেশি ডিপ্রশনে থাকেন ।
কেউ খুব সুন্দর করে ট্যাকল দিতে পারেন কেউবা হিমশিম খান ! কারো কারো মধ্যে ডিপ্রেশন থেকে আস্তে আস্তে জন্ম নেয় সুইসাইডাল টেনডেন্সি !
এখান থেকেই আমার কথা শুরু ।
সবার আগে মনে রাখতে হবে যে বা যারা সবসময় আপনাকে পিন মারা কথা বলে ডিপ্রশনে ফেলে দেয় তারা কখনোই আপনার কাছের মানুষ নয় ।সবার আগে এটা বুঝতে হবে ।
সেটা ঘরের মানুষ হোক বা বাইরের ।আগে মানুষ চিনুন ।তারপর শিখুন ইগনোর করা !
সবসময় সম্ভব হবে না জানি ..কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে ।গাদা গাদা স্ট্রেস নিয়ে চরম মানসিক অশান্তির চেয়ে এটা তুলনামূলক ভাবে সহজ বলে আমার মনে হয় ।
লেডি ডক্টর রা মনে করে দেখেন তো - কি পরিমান পড়ার লোড..কত রাত জাগা..কত চোখের পানি নাকের পানি এক করে প্রফ পাস করেছেন..সহস্র রাত না ঘুমিয়ে পোষ্টগ্রাজুয়েশনে চান্স পেয়েছেন..কেউ কেউ হয়তো এখনো পান নি..লেগে থাকলে হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্...
কিন্তু লেগে থাকার জন্য বেঁচে থাকতে হবে ..ভাল থাকতে হবে..
আর সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে ভাল রাখার গুরু দায়িত্ব টা আপনার নিজেকেই নিতে হবে !
সবাই চাইবে আপনাকে দুমরে মুচড়ে ভাংগতে ..কিন্তু আপনার খুঁজে নিতে হবে আসলে আপনি কি চান ? আপনার কি করতে ভাল লাগে ? কারো হয়তো পড়তে আর ভাল লাগে না..অন্য কোন বিষয়ে অনেক ইন্টারেষ্ট ..কারো হয়তো লেখালেখি..কারো পেইন্টিং ..কারোর বা শুধু শুয়ে থাকা !!
হোয়াটএভার ..প্লিজ ডু ইট হোয়াট একচুয়ালি ইউ ওয়ান্ট !
জীবন কয়দিনের ? এত স্ট্রেস ..এত হাহাকার নিয়ে ডিপ্রশনে থাকলে আপনাকে যারা অরিজিনালি ভালবাসে তাদের ভালবাসবেন কখন ?
চলুন না একটাই তো জীবন ... প্রচ্চুর ভালবাসি নিজেকে ... কনফিডেন্ট হই ..
এবং পাশাপাশি -
অপাত্রে ভালবাসা না বিলিয়ে পাত্রে বিলানো শিখি ......
সময় জার্নাল/ইএইচ
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল