আত্মাটা হেরে গেলে
আমাকে তুমি ভিষণ গহীন এক জঙ্গলে
একলাটি রেখে গেলে,
যেখানে নিবিড় পাতার ফাঁক গলে,
সূর্যের আলো পৌঁছোয় না,
যেখান পতঙ্গের রাজত্ব, আঁধারের দৌরাত্ম ,
হিংস্র শ্বাপদের বসবাস।
অথচ আমাকে শর্ত দিলে আঁধার না মাখি গায়ে।
তা কি করে হয় প্রভু?
জঙ্গুলে হাওয়াতে আগুন যে নিভে যায় বারবার।
আমাকে তুমি ঝঞ্ঝা - বিক্ষুব্ধ এক অসীম সাগরে রেখে গেলে,
একটি মাত্র ডিঙি সম্ভল করে।
বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে,
সাথে বিদ্যুৎ চমক আর ঢেউয়ের প্রলয় নাচ,
ডিঙিটার চারপাশে একঝাঁক দাঁতালো হাঙর,
ডিঙিটাও টলমল পানির প্রবল তেজ্ব।
অথচ আমাকে শর্ত দিলে পানি না লাগাই গায়ে।
তা কি করে হয় প্রভু?
নড়বড়ে ডিঙিটাতে ঢেউ যে আঘাত করে বারবার।
আমাকে তুমি রাজপথে,
বিক্ষোভ মিছিলের বিপরীতে,
রেখে গেলে একাকী,
জনতার চিৎকার বাড়ছে,
প্রবল হট্টগোলে ফাটছে,
অস্ত্রের মহড়া, রক্তে রক্তে খেলে বিদ্যুৎ নাচ,
এতটা দুর্বল আমি, মন আর দেহ যেন অবসন্ন।
অথচ আমাকে শর্ত দিলে মিছিলের বিপরীতে হাঁটতে।
তা কি করে হয় প্রভু?
মিছিলের ধাক্কায় আমি যে ছিটকে পড়ি বারবার।
আমাকে তুমি নাচের আসরে
একা একদম একাকী,
সুর আর সুরার আবর্তে রেখে গেলে,
যেখানে উন্মাদ আবেগে মায়া আর মোহ যেন খেলছে,
আনন্দ - উচ্ছ্বাসে রঙিন সুতোয় মন বাঁধছে।
অথচ আমাকে শর্ত দিলে রঙিন ও আলো যেন ছোঁয়না আমায়।
তা কি করে হয় প্রভু?
জীবনের উচ্ছ্বাসে মরণ যে ভুলে যাই বারবার।
এত প্রতিকূলতা, এতটা বিপত্তি,
তার মাঝে রেখে গেলে,
একটামাত্র বাতি দিয়ে।
অথচ আমাকে শর্ত দিলে বাতিটা জ্বালাতে হবে চীরকাল।
তা কি করে হয় প্রভু?
দুর্বল এ আত্মাটা হেরে গেলে করবে বিচার!