এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর গ্রামের খালের উপর নির্মিত বেশ পুরনো একটি ব্রিজ। এটি দেশ স্বাধীনের আগে নির্মিত। এক সময় এর অনেক কদর থাকলেও এখন বেশ অবহেলিত। বয়সের ভারে ব্রিজটির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। রেলিং ভেঙ্গে গেছে। তাতেও তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু প্রধান সমস্যা দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। ব্রিজে উঠতে পারেন ও চলাফেরা করতে দুই পাশেই মই লাগে। যার কারনে এ পথে চলাচলকারীদের ভোগান্তির যেন অন্ত নেই। যানবাহন তো দুরে থাক পায়ে হেঁটে চলাও যেন ভীষন কষ্ট। সব মিলিয়ে এ ব্রিজ পারাপার হতে গিয়ে অত্র এলাকাবাসী ঝুঁকি আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন।
জানাগেছে, উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের গ্রামের বাজার এলাকায় স্বাধীনতার আগে ব্রিজটি নির্মিত হয়। ওই সময় থেকে অত্র এলাকার মানুষের ভাঙ্গা উপজেলা সদরে যাতায়াতের এটিই ছিল প্রধান ও একমাত্র পথ। তখন এ ব্রিজের গুরুত্ব ছিল। মানুষ যানবাহন সবই চলতো। কিন্তু এখন বিশ্ব রোড হওয়ার পর থেকে কদর কমতে থাকে এই পথের। স্থানীয় ও আশপাশের এলাকাবাসী নিরুপায় হয়ে বাসের মই তৈরি করে কষ্ট আর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে।
এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরতে ঘুরতে এখন এলাকাবাসী ক্লান্ত আর ক্ষুব্ধ। শুধু আশ্বাসেই পেরিয়ে গেছে কয়েক যুগ কাজের কাজ হয়নি কিছুই। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে বাঁশের মই বানিয়ে কোন মতে পায়ে হেঁটে চলছে। কৃষি জমির ফসলাদি,রাত-বিরেতে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে কিংবা বৃদ্ধ-গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একাধিক মানুষ কাঁধে করে অথবা বাঁশে রশি বেঁধে কাঁধে ঝুলিয়ে ব্রিজ পার করতে হয়। এভাবে মই বেয়ে ব্রিজ পারাপার হতে গিয়ে অনেকই আহত হয়েছেন।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। কিন্তু এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কোন লক্ষ্য নেই। নিজের চাঁদা তুলে মই তৈরি করে কোন মতে পায়ে হেঁটে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। এই নুন্যতম বাঁশে মই তৈরির খরচ দিয়েও কেউ সাহায্য করে না। প্রতি বছর কয়েকবার এই মই তৈরি করতে হয়। এলাকাবাসীর আক্ষেপ-হয়তো ব্রিজটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হোক অথবা ব্রিজ ভেঙ্গে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হোক। তাহলে আমাদের স্থায়ী একটা সমাধান হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা ভিটে-মাটি বিক্রি করে অন্যত্র বসবাসের ব্যবস্থা করতে পারি।
এলাকা বাসীরা ভোগান্তি,কষ্ট আর ঝুঁকির কথা আক্ষেপ করে জানান, এসমস্যা দীর্ঘদিনের। তবে অনেকেই আশার আলো ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বাড়ি-ঘর তৈরি করে বসবাসের চিন্তা ভাবনা শুরু করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান (৬৫) বলেন, এই ব্রিজটি পাকিস্তান আমলের তৈরি। একসময় এই ব্রিজ পার হয়ে এই রাস্তা দিয়ে আমরাসহ অত্র অঞ্চলের মানুষের ভাঙ্গা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল। আগে বড় বড় বন্যা হতো। বিশেষ করে ১৯৮৮ সালে বন্যার কারনে তীব্র স্রোতে মাটি সরে গেছে ব্রিজের দুই পাশ থেকে। একসময় ভাঙ্গা যাওয়ার প্রধান রাস্তা ও ব্রিজ দিয়ে মানুষজন ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করতো। বিশ্ব রোড হওয়ার পর থেকে এর কদর কমে গেছে।
এ ব্যাপারে ব্রিজ সংলগ্ন বাসিন্দা ওমর আলী সেখ (৫৫) বলেন, প্রায় ২১ বছর আগে অন্য জায়গা থেকে এখানে এসে বাড়ি-ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছি। এছাড়া আমাদের দেখাদেখি আরও বেশ কয়েকটি পরিবার এখানে এসে বসতি শুরু করে। কিন্তু কোন মেম্বার চেয়ারম্যান এই ব্রিজের সংযোগ সড়কে এক ঝুড়ি মাটি দেই নাই। সব সমস্যা আর সব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে আমাদের। চলতে গিয়ে অনেকেই হাত-পা-কোমড় ভেঙ্গে আহত ও পঙ্গুত্ব বরন করেছেন। অনেক বার মেম্বার চেয়ারম্যান এর নিকট আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি। এখন আমরা দু পাসের লোকজন চাঁদা তুলে ব্রিজে ওঠার জন্য বাঁশ কিনে সাকোর মতো করে দিয়েছি।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রাশেদা বেগম (৪৮) বলেন, আমাদের আসল সমস্যা হচ্ছে কেউ যদি অসুস্থ হয়, কোন গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতালে নিতে হলে চরম ভোগান্তি-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। শাহিন মোল্লা (২৮) বলেন, আমাদের সকলের অনেক জমি খালের ওপার পাশে। যার কারনে আমাদের ফসল ঘরে তোলার সময় মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও আমরা কোন উপকার পাচ্ছি না। অবিলম্বে দ্রুত ব্রিজের দুই পাশে সংযোগ সড়কের দাবী জানান তিনি।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, তুজারপুর এই রকম একটা ব্রিজ আছে এটা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে তুজারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরিমল চন্দ্র দাস বলেন,এটি ব্রিটিশ আমলের নির্মিত একটি ব্রিজ। এ রাস্তা এবং ব্রিজটি দিয়ে আগের মতো তেমন কোন লোকজন যাতায়াত করে না। তবে ওখানে কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। এছাড়াও মাঠ থেকে কৃষকরা এ পথে বিভিন্ন ফসল আনা নেওয়া করে। যদি সরকার উদ্যোগ নেয়,তাহলে সংযোগ সড়ক ও ব্রিজটির সংস্করণ করা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আজিম উদ্দিন জানান, আমার জানা ছিল না, আপনাদের মাধ্যমে জানলাম এই ব্রিজের খবর। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে খুব দ্রুত এই ব্রিজ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো যাতে ব্রিজের দুই প্রান্তে মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী হয়।
সময় জার্নাল/এলআর