শহরে মাঝরাত্তির
.................
সমস্ত শহরটা ঘুরে এসো মাঝরাত্তিরে,
কতগুলো বাড়ির জানালার ফাঁক গলে
দেখতে পাবে ঘুম ঘুম নীলচে আলো,
কতগুলো বাড়িতে তখনও শোরগোল, ঝলমলে রোশনাই।
এই শহরটা ঘুমায় শেষ রাত্তিরে,
যখন প্রতিপালক ইচ্ছাপূরণের ঝোলা নিয়ে আসেন
আর চাওয়ার মতো কোনো উত্তোলিত হাত খুঁজে পান না।
এ শহর সারারাত জেগে থাকে, সাধু-সন্ন্যাসী সবাই,
যে যার ধান্দায় বাঁচে।
এখানে আয়েশি সুখ কিনে নিতে হয়,
সময়, স্বাস্থ্য আর শান্তির বিনিময়ে।
সারাদিন, সারারাত সুখ খুঁজতে গিয়ে,
শেষ রাতে ক্লান্তিরা ঢলে পড়ে।
যখন প্রতিপালক ইচ্ছাপূরণের ঝোলা নিয়ে আসেন
আর চাওয়ার মতো কোনো উত্তোলিত হাত খুঁজে পান না।
শহরের মাথার ওপর মস্ত বড় একটা চাঁদ দুলতে থাকে,
নিয়নের তীব্র আলোয় কেউ তাকে দেখতে পায়না।
শেষ রাতে চাঁদ যখন ক্ষয়ে আসে,
বিজলী বাতিও তখন নিভু নিভু,
একসাথে জ্বলে তারা একসাথে নেভে,
তাই আসল-নকলের ব্যবধানটা, কোনো মস্তিষ্ক যেন ছুঁতেই পায়না।
আসলে-নকলে মিলে শহরের রাতগুলো,
শেষ বেলায় এসে গুলিয়ে যায়,
শুধু বেওয়ারিশ কুকুরগুলো রাস্তায় ঘুরে ফিরে হল্লা করে,
মানুষের আবাসন ঘুমের আমেজে ডোবে।
যখন প্রতিপালক ইচ্ছাপূরণের ঝোলা নিয়ে আসেন
আর চাওয়ার মতো কোনো উত্তোলিত হাত খুঁজে পান না।
শহরের ক্লাব, রেস্তোরাঁ আর সৌখিন দোকানগুলো,
মাঝরাত অবধি জমজমাট থাকে,
সিনেমা হলের শেষ দর্শকটিও,
সিগারেটের ধোঁয়া উড়োতে উড়োতে,
রাত ঢলে পড়লেই ঘরে ফেরে,
আর অশ্রাব্য গালিতে হতচকিত করে তোলে
ঘুমন্ত আধপেটা শিশুগুলি এবং তাদের জননীকে,
মালিকানার ক্ষমতা জাহির করে,
তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে নাক ডাকতে থাকে পরিতৃপ্তিতে।
রাজ্যের মাতাল, পাগল আর অন্ধকারের জীব,
সারাদিন, সারারাতের কাড়াকাড়ির অসহ্য জীবন পার করে,
শেষ রাতে এসে বিলীন হয়ে যায়,
ক্লান্তিতে, শ্রান্তিতে অসহায় ভ্রান্তিতে!
যখন প্রতিপালক ইচ্ছাপূরণের ঝোলা নিয়ে আসেন
আর চাওয়ার মতো কোনো উত্তোলিত হাত খুঁজে পান না।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২০ নভেম্বর ২০২১।