ইসাহাক আলী, নাটোর: বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে নাটোরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের সাথে-বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপে নাটোর সদর থানার ওসি মুনসুর রহমান, দৈনিক যুগান্তরের নাটোর প্রতিনিধি শহীদুল হক সরকার, বাংলাভিশনের স্থানীয় প্রতিনিধি কামরুল ইসলাম সহ অন্তত ১৫জন আহত হয়েছে। এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় যুবদল নেতা ডালিমসহ ৪ নেতাকর্মিকে আটক করেছে পুলিশ।
আটক অন্য তিনজন হলেন ছাত্রদল নেতা শামসুল ইসলাম রনি, বাড়ির কেয়ার টেকার আসলাম উদ্দিন ও আয়েন উদ্দিন টুকু। তাদের আটক করে থানা হেফাজতে রেখেছে পুলিশ।
আহতদের মধ্যে সদর থানার ওসি এবং সাংবাদিক শহীদুল হক সরকারসহ অন্যদেরকে নাটোর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। পরে শারিরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে সাংবাদিক শহীদুল হক সরকারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলর সহধর্মিনী বিএনপি নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবিসহ আহতের সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি করেছে বিএনপি।
সোমবার সকালে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবীতে শহরের আলাইপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে নেতাকর্মিরা। সমাবেশ শান্তিপূর্ন করতে নেতাকর্মিদের নির্দেশ দেয়া হলেও বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তারা। এ সময় পুলিশ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ শুরু করে। পরে নেতাকর্মিরি পাল্টা ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশও টিয়ারশেল রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে ইটের আঘাতে সদর থানার ওসি মুনসুর রহমান, দৈনিক যুগান্তরের নাটোর প্রতিনিধি শহীদুল হক সরকার, বাংলাভিশনের স্থানীয় প্রতিনিধি কামরুল ইসলাম সহ অন্তত ১৫জন আহত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে বিএনপির কার্যালয় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বিএনপির নেতা সাবিনা ইয়াসমিন ছবি অভিযোগ করেছেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে শুরুর আগেই তাদের নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ ও কাঁদানো গ্যাস ছুঁড়ে। এ ঘটনায় তিনিসহ ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু জানান, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসুচীতে হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন ছবি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন, ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম, বনপাড়া পৌর কাউন্সিলর বেলাল হোসেন, বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ সহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইসলাম সৃজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
দুলু বলেন, বিএনপি সরকার পতনের কোন আন্দোলন করছেনা। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবীতে শান্তিপূর্ণ কর্মসুচীতে বিনা উস্কানীতে যে হামলা চালানো হয়েছে তার জন্য তিনি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, তার সরকারের আমলে শান্তি ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ হতে দেওয়া হয়নি। অথচ এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে আতংকিত
করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। এই অশান্ত ও আতংকিত পরিবেশ সৃষ্টির সাথে যারা জড়িত তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসুচী পালনের জন্য তাদের বলা হয়। কিন্তু তারা পুলিশের শান্তিপূর্ণ অবস্থান লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে অশান্ত অবস্থার সৃষ্টি করে। এ সময় পুলিশ আবাও শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসুচী পালনের কথা বলতে গেলে তাদের উদ্দেশ্যে ইট নিক্ষেপ করা হয়। তবে পুলিশ কোন লাঠিচার্জ করেনি। ধাওয়া করেছে মাত্র। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ১৫ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এমআই