শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

লালমনিরহাটে কর্মচারীদের কোয়াটারে কর্মকর্তাদের বসবাস!

বুধবার, নভেম্বর ২৪, ২০২১
লালমনিরহাটে কর্মচারীদের কোয়াটারে কর্মকর্তাদের বসবাস!

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত। লালমনিরহাট:  কর্মচারীদের নামে বরাদ্ধ দেয়া কোয়াটারে বসবাস করছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা। সরকারী বাসা বরাদ্ধ নিলে বেতনের একটা অংশ বাসা ভাড়া হিসেবে বেতন থেকে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে বেতন বেশি হলে বাসা ভাড়াও বেশি দিতে হয়। বাসা ভাড়ার টাকা সরাসরি সরকারের কোষাগারে জমা হয়। অনেকেই এ ভাড়া না দিয়ে বসবাস করায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

জানা যায়, আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ২৯ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করে সরকার। রোগীর চাপ বিবেচনা করে পরবর্তিতে তা ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। সেই অনুযায়ী নতুন ভবনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ২০/২৫টি পরিবারে কোয়াটারও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ দেয়া কোয়াটারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা বসবাস করছেন।

সরকারী বাসা বরাদ্ধ নিলে বেতনের একটা অংশ বাসা ভাড়া হিসেবে বেতন থেকে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে বেতন বেশি হলে বাসা ভাড়াও বেশি দিতে হয়। কিন্তু কর্মচারীর নামে বাসা বরাদ্দে ভাড়ার পরিমাণও কম। আর এ টাকা কর্মকর্তারা কর্মচারীকে দিয়ে দিচ্ছেন। ফলে সরকার একটি মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এছাড়া, কোন কোন কোয়াটার সরকারী খাতায় শুন্য দেখানো হলেও ভাড়া না দিয়ে এসব কোয়াটারে থাকছেন কর্মকর্তাররা। সরকারি কাজে আসা অস্থায়ী কর্মকর্তাদের বিশ্রামের জন্য নির্মাণ করা ডরমেটরিও দীর্ঘ দিন ধরে বাসা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হাসপাতালের কোয়াটার ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য সহকারী মশিউর রহমানের নামে বরাদ্ধ করা কোয়াটারে ছিলেন উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার(স্যাকমো) আরিফ হোসেন। কয়েক মাস টাকা না দেয়ায় মশিউর রহমানের সাথে বিতর্ক বাঁধে। অবশেষে বাসা ছেড়েছেন মর্মে মশিউর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেন। এরপরও সেই আবেদন গ্রহণ না করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন থেকে বাসা ভাড়া কেটে নেয়া হয়। এ নিয়েও মশিউরের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বেশ বিতণ্ডা হয়। পরবর্তিতে তা নিষ্পত্তি হয় ও বাসা পরিবর্তন করা হয়।

সিএইচসিপি মিলন বর্ম্মনের নামে বরাদ্ধ দেয়া কোয়াটারে ২০১৬ সাল থেকে বসবাস করছেন উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আব্দুস সালাম। অপর সিএইচসিপি মশিয়ার রহমানের বরাদ্ধ নেয়া বাসায় ৭ বছর ধরে থাকেন অপর স্যাকমো সৌরভ দত্ত। স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন থাকেন স্বাস্থ্য সহকারী গোলাম রব্বানী মিরুর নামে বরাদ্ধের বাসায়। পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন হাসপাতালের কোয়াটারে। 

সরকারের কোয়াটারে এক যুগের বেশি সময় ধরে ফ্রিতে থাকছেন আমির হোসেন, ফার্মাসিস্ট মাহাফুজ, ইপিআই টেকনিশিয়ান শান্তনা বেগম, নার্স মৌমিতা, নার্স শ্যামলী রানী, নার্স সাথী আকতার, নার্স শাহিনা বেগম, নার্স রওশনারা, নার্স নমিতা রানী, নার্স মাধবী রানী ও  নার্স রিক্তা বেগম। ডরমেটরিতে থাকছেন সুপারভাইজার লক্ষ্ণী রানী।

কোয়াটারের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনের ফরমে আবেদন করার দুই মাসেও তথ্য প্রদান করেননি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তবে কোয়াটারে অবস্থানকারীরা ফ্রিতে থাকার বিষয়টি ও অন্য নামে বরাদ্ধ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।

কোয়াটারে ফ্রিতে থাকা ফার্মাসিস্ট মাহাফুজ বলেন, স্যারকে বলে বিশেষ সুবিধায় কোয়াটারে এক বছর ধরে আছি। তবে কোন ভাড়া কাটা হয় না।

নার্স সাথী আক্তার বলেন, গত জানুয়ারী থেকে কোয়াটারে আছি। কোন বাড়া দিতে হয়নি। মাঝেমধ্যে কিছু টাকা অফিসের একজনের হাতে জমা দিতে হয়।

নার্স মাধবী রানী বলেন, একটু সুবিধা পেতে সরকারী কোয়াটারে বিশেষ সুবিধায় থাকি। কোন ভাড়া কাটা হয় না। তবে সাম্প্রতি নিজ নামে বরাদ্ধ চেয়ে আবেদন করেছি।

কোয়াটার বরাদ্ধ নেয়া স্বাস্থ্য সহকারী গোলাম রব্বানী মিরু বলেন, আমি নিজ বাড়িতে থেকে অফিস করি। কিন্তু আমার নামে বরাদ্ধ নেয়া কোয়াটারে থাকেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফরিদ। তিনি এ জন্য প্রতি মাসে বেতনের কর্তনকৃত ৫হাজার ৯৬৩টাকা আমাকে দেন। বাসার যাবতীয় দায়িত্ব তার। আমি বাসা ছেড়ে দিতে সাম্প্রতি আবেদনও করেছি।

অন্যের নামে বরাদ্ধ নেয়া স্যাকমো সৌরভ দত্ত বলেন, সিএইচসিপি'র নামে বরাদ্ধ নেয়া কোয়াটারে বসবাস করি। তার বেতনের যেটুকু কর্তন হয়। তা আমি তাকে প্রতিমাসেই পরিশোধ করি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ বলেন, বসবাসযোগ্য কতটা কোয়াটার রয়েছে তা এ মুহুর্তে আমার জানা নেই। ফ্রিতে সরকারী কোয়াটারে বসবাস করার কোন নিয়ম নেই। বিশেষ কিছু জানার থাকলে তথ্য অফিসে আবেদন করুন। সেখানে তথ্য পাঠানো হবে।

বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায়কে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, হাসপাতালের বিষয়টি আমার জানা নেই। ভাড়ামুক্ত ফ্রিতে সরকারী কোয়াটারে থাকার কোন সুযোগ নেই।

সময় জার্নাল/আরইউ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল