সময় জার্নাল প্রতিবেদক : দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ও সবচেয়ে মারাত্মক ধরন বি.১.১৫২৯-এর আনুষ্ঠানিক নাম ‘ওমিক্রন’ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। একই সঙ্গে ভাইরাসটির আরেক ধরন ডেল্টার মতো ওমিক্রনকেও ‘উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ধরন’ বা ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ঘোষণা করা হয়েছে।
ডব্লিউএইচও শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় সব প্রদেশে ওমিক্রনে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। বৎসোয়ানা, ইসরায়েল, বেলজিয়াম, হংকং, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডসেও মিলেছে উপস্থিতি। করোনার এই নতুন ধরনটির বিপুলসংখ্যক মিউটেশন রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- ওমিক্রন ধরনে আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ব্যক্তির পুনঃসংক্রমণিত হওয়ার অনেক ঝুঁকি বেশি রয়েছে। তার পরও এর প্রভাব ভালোভাবে বুঝতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।
করোনার এই নতুন ধরনটি ঠেকাতে এরই মধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাজ্য, ভারত, ইজরায়েল, ইতালি, আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ। সংক্রমণ ঠেকাতে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি দেশে যাওয়া এবং সেসব দেশ থেকে প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে তারা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য তাদের সম্মেলন বাতিল করেছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ওমিক্রন মোকাবিলায় দেশের সব প্রবেশ পথে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে গতকাল থেকেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় কঠোরতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সব বিমানবন্দরেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেডঅ্যালার্ট জারির। সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান জরুরি প্রয়োজনে সীমিত আকারে করতে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় বিমান, নৌ ও স্থলবন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৫৯১ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছেন ৮ হাজার ৩৪৯ জন, স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজার ৮২ জন এবং সমুদ্রবন্দর দিয়ে এসেছে ১৬০ জন। এ সময়ে ৩২০ জনকে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে এবং আইসোলেশন করা হয়েছে ৪১ জনকে।
দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে স্থলসীমান্তও রয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট, বুড়িমারী, কুড়িগ্রাম, সোনাহাট (ভূরুঙ্গামারী) ও তুরা রোড (রৌমারী), দিনাজপুর, হিলি ও রাঁধিকাপুর, পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা (তেঁতুলিয়া), চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সোনামসজিদ (শিবগঞ্জ), সিলেট-তামাবিল, জকিগঞ্জ ও সুতারকান্দি (বিয়ানীবাজার), হবিগঞ্জ-বাল্লা (চুনারুঘাট), মৌলভীবাজার-ফুলতলা, চাতলা (কুলাউড়া), শেরপুর-নাকুগাঁও, ময়মনসিংহ-গোবরাকুড়া (হালুয়াঘাট), জামালপুর-ধানুয়া (বকশীগঞ্জ)। এসব বন্দর দিয়ে প্রতিদিন শহস্রাধিক মানুষ দেশে প্রবেশ করেন। তাই স্থলবন্দরগুলোতেও রেডঅ্যালার্ট জারি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, ওমিক্রন করোনা ভাইরাসের যে কোনো ধরনের চেয়ে এর স্পইক প্রোটিন পরিবর্তনের সক্ষমতা প্রায় ৩০ গুণ বেশি। এ ছাড়া বিদ্যমান টিকাগুলো শরীরে যে ইমিউনিটি তৈরি করে, সেই ব্যবস্থাকে এড়িয়ে সংক্রমণ করার সক্ষমতা রয়েছে এটির। এ ক্ষেত্রে যাদের কো-মর্বিডিটি আছে তাদের এটি ভয়াবহভাবে আক্রান্ত করতে পারে। ওমিক্রন থেকে দেশকে নিরাপদে রাখতে স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করতে হবে। বিদেশ থেকে আসাদের কোভিড-১৯ ছাড়পত্র না থাকলে অবশ্যই করতে হবে কোয়ারেন্টিন। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে নতুন এই ধরন দেশে প্রবেশ করতে না পারে। পাশাপাশি মেশিনপত্র ও রিয়েজন্ট ঠিক আছে কিনা, সেটি দেখে সব ল্যাব প্রস্তুত রাখতে হবে।
ওমিক্রন ঠেকাতে বাংলাদেশের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে গতকাল কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এদিন সকালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির সেকেন্ড স্পেশাল সেশনে অংশ নিতে যাত্রাকালে এক অডিওবার্তায় মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি আফ্রিকাসহ ইউরোপের কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন নামক করোনার নতুন একটি ধরন বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবগত। এ বিষয়ে করণীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে দেশবাসীকে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘ভাইরাসটির নতুন ধরন খুবই অ্যাগ্রেসিভ। সে কারণে আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ এখন স্থগিত করা হচ্ছে। সব এয়ারপোর্ট, ল্যান্ডপোর্টে বা দেশের সব প্রবেশপথে স্ক্রিনিং আরও জোরদারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সারাদেশেই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে ও মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে সব জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের আক্রান্ত অন্যান্য জায়গা থেকে যারা আসবে, তাদের বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনোভাবেই স্ক্রিনিং ছাড়া যেন আক্রান্ত দেশের কোনো ব্যক্তি দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওমিক্রন বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুুষ্ঠিত হবে। অধিদপ্তরের ইপিডেমিওলজি গ্রুপকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমি এয়ারপোর্টে নির্দেশ দিয়েছি সার্ভিলেন্স জোরদারের। দক্ষিণ আফ্রিকা বা সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে যেন স্ক্রিনিং ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করতে না পারে। বিশেষ করে যাদের টিকা সনদ নেই এবং বিমানে ওঠার আগে পরীক্ষা করা নেই, তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে।
সময় জার্নাল/এসএ