অপেক্ষায় থাকি
আমরা বহুকাল ধরে অপেক্ষায় আছি,
স্বপ্নালু চোখে, দুঃস্বপ্নের মাঝে, দীর্ঘশ্বাস আর সতর্কতায়।
সংসারের আনাজপাতির হিসাব কষতে কষতে
আমরা উৎসাহী হয়ে উঠি, অপেক্ষা করতে থাকি,
আমাদের অপেক্ষা একটা যুদ্ধের জন্যে।
আমাদের বউ-ঝিরা শীতের সকালবেলা,
ছাদের ওপর তোষক নাড়তে গিয়ে উদাস হয়ে যায়,
উনুনে ভাতের হাঁড়ি টগবগ করে ফুটতে থাকে,
বউটি ছাদের পরে উদাস হয়ে যায়।
কোলের শিশুর মুখ হঠাৎই সে যায় ভুলে,
খবরের কাগজের শিশুটির মুখখানা আচ্ছন্ন করে রাখে,
থেঁতলানো মুখখানা অস্পষ্ট আর যন্ত্রণাক্লিষ্ট।
উনুনের হাঁড়ি থেকে পোড়া গন্ধ আসে,
আর বউটি অপেক্ষায় থাকে।
কর্তা অফিস থেকে বাসে ঝুলে ঘরে ফেরে,
ধাক্কাধাক্কি করে, ধস্তাধস্তি করে, ঘাড় ব্যাথা হয়ে।
সময়ের সাথে চলে, নিয়মের কথা বলে,
স্বদেশের সুবাধ্য, সৎ নাগরিক।
তবু চাপরাশি দেঁতো হেসে লিফট দিতে চাইলে—
বিক্ষুব্ধ হতাশায় অপেক্ষা করে থাকে,
অপেক্ষা একটা যুদ্ধের জন্যে।
সন্ধ্যার বিনোদন সংকটে থাকে রোজ,
দর্শক আসন প্রায় শূন্য।
রিমোটের টানাটানি নিস্তার পেয়ে গেছে,
বসার ঘরটা জনশূন্য।
হতভাগা টিভিখানা খুললেই মনে হয়,
ধরণী এবার তুমি দ্বিধা হও,
ধরণীও লজ্জায় নাক মুখ কুঁচকায়,
ধরণীও প্রানপণে ক্ষমা চায়।
কন্যা বখাটে হাতে, পুত্র ভ্রান্ত পথে,
রেলের বস্তি হয় বৃদ্ধ পিতার শেষ আশ্রয়,
সে এক দারুণ সমন্বয়!
তাই তারা অপেক্ষায় থাকে একটা যুদ্ধের জন্যে।
একটা পরিবার, একটা দেশ, একটা পৃথিবী,
অস্থির উৎসাহে অপেক্ষায় থাকে।
সেই যুদ্ধটা নেমে আসুক ক্ষুব্ধ মাটির পরে।
না হোক রক্ত ক্ষয়, না হোক প্রাণের লয়,
বুদ্ধিমত্তা যাক পাল্টে।
যেমন পাল্টে ছিলো মরুর কদর্যকে,
সেই কতকাল আগে।
তেমনি করেই আসে যদি,
তাই আমরা চিরকাল অপেক্ষায় থাকি,
আমরা অপেক্ষায় থাকি একটা যুদ্ধের জন্যে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২ ডিসেম্বর ২০২১।