চলে গেল শেষ ট্রেন
শেষ ট্রেনটা ধরবো বলে,
তাড়াহুড়ো করে ছুটে এলাম স্টেশনে।
শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ তখন ডুবছে পশ্চিমের কোনে।
গতরাতে অভুক্ত ছিলাম,
যেন ঘুমটা জাঁকিয়ে না আসে,
কম্বল তেমনই ছিলো একপাশে ভাঁজ হয়ে,
সর্বস্বটুকু পোটলায় বেঁধে,
দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিলাম,
যেন ঘুম না আসে।
ঘুম এলো সর্বনাশীর মতো ভিষণ আক্রোশে,
চিরকালের অভ্যেসে ঘুম এলো সর্বশরীর জুড়ে।
এ্যালার্ম ঘড়িটা যেন কতবার বেজে গেলো,
হুতোম প্যাঁচার ডাক, চৌকিদারের হুইসেল,
সব আয়োজন বৃথা, ঘুম এলো দেয়ালে হেলান দিয়ে,
সর্বনাশীর মতো ভিষণ অগোচরে।
যখন পেলাম সাড়া রাত্রি দ্বিপ্রহর।
চাঁদ যেন ঝিমিয়েছে, বাতাসও থমকে গেছে,
সবাই দেখলো আমি ছুটছি উর্ধশ্বাসে,
শেষ ট্রেনটা ধরবো বলে।
আড়াআড়ি ছুটে এলাম সর্ষের আ'ল বেয়ে,
পরিচ্ছন্ন পথে দুরত্ব ছেড়ে।
ফনিমনসার ঝোপ, ডোবার নরম কাদা,
শ্যাওলা পিছল ঘাটে লুটোপুটি খেয়ে।
সবাই আগেই গেছে, সব্বাই চলে গেছে,
রাজকীয় সমারোহে রাজপথ ধরে,
তাদেরই চিহ্ন ছুঁয়ে ফুটে আছে ভাঁটফুল,
বিজয়ীরা বরাবর সংবর্ধিত।
সময়কে অসময়ে কক্ষনো টানেনি,
ঘুমের মাঝেও তারা বিনোদন আনেনি,
কর্মে কর্মী ছিলো, জ্ঞানে দিগগজ।
সেই দলে যাবো বলে স্বপ্ন দেখেছি শুধু,
শরীর এলিয়ে দিয়ে এমনই অবোধ।
সময় এলো যখন ট্রেনের হুইসেল শুনি,
উদভ্রান্তের মতো ছুটে যাই, পড়ে যাই, উঠে যাই,
শুধু শেষ ট্রেনটা ধরবো বলে।
শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ তখন ডুবছে পশ্চিমের কোনে।
চাঁদ ডোবা স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছি ঠাঁই,
আমাকে নিঃস্ব করে চলে গেল রাত্রির শেষ ট্রেন।
যাত্রীরা উৎসাহে আমাকেই দেখছে,
ভীষণ অবজ্ঞায় অথবা মমতা ভরা আর্তিতে।
আমি তাড়াহুড়ো করে ছুটে এলাম স্টেশনে,
শেষ ট্রেনটা ধরবো বলে,
আর ট্রেনটা মিলিয়ে গেলো দিগন্তে,
আমাকে একলা রেখে নির্ঝঞ্ঝাটে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৫ ডিসেম্বর ২০২১।