শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

‘পেস্টিসাইড উৎপাদনে কঠিন প্রতিবন্ধকতায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো’

বুধবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২১
‘পেস্টিসাইড উৎপাদনে কঠিন প্রতিবন্ধকতায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো’

সময় জার্নাল প্রতিবেদক : দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় কৃষিখাত বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আর কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পেস্টিসাইড (বালাইনাশক) উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু পেস্টিসাইড উৎপাদনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আজ কঠিন প্রতিবন্ধকতার মুখে। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ২০১০ সালের পুরোনো একটি প্রজ্ঞাপন এবং পেষ্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারী কমিটির ( PTAC ) এর অসঙ্গতিপূর্ণ শর্ত।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএএমএ) এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য জানান। এসময় রহমান পেস্টিসাইড এন্ড কেমিক্যালস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু জাহাঙ্গীর খানসহ এ খাতের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে পেস্টিসাইড সংক্রান্ত সর্বশেষ যে আইন প্রণীত হয়, সেখানে দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানীর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সুপারিশেও দেশীয় কৃষি শিল্পের বিকাশের স্বার্থে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানীর জন্য সোর্স উন্মুক্ত করার সুপারিশ উল্লেখ রয়েছে। 

তা সত্ত্বেও ২০১৫ সাল থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কারিগরী পরামর্শ প্রদানকারী কমিটি PTAC (পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারী কমিটি) দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য একাধিক বিদেশী সোর্স (প্রতিষ্ঠান) পছন্দের সুযোগ রুদ্ধ করে রেখেছে। তারা শর্ত দিয়ে উল্লেখ করেছে, ‘বালাইনাশক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির তারিখ হইতে দুই বছরের মধ্যে রেজিস্ট্রার্ড বালাইনাশক ম্যানুফেকচারার বা সোর্স পরিবর্তনের আবেদন করা যাবে না।’ এই শর্ত বিদ্যমান আইনের পুরোপুরি লঙ্ঘন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

বিএএমএ নেতারা জানান, এদেশে ব্যবসায় নিয়োজিত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম ঠিক উল্টো। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত তাদের প্লান্ট থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান যাতে প্রতিযোগিতামুলক দামে সংগ্রহ করতে পারে- সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে মূল্য যাচাই ও বাছাই করে একাধিক সোর্সের কাছ থেকে কাঁচামাল আমদানী করতে পারছে। 

কিন্তু দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করে বলা হয়েছে, তারা শুধু একটি নির্দিষ্ট বিদেশী সোর্সের (কোম্পানি) কাছ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানী করতে পারবে। কাঁচামাল আমদানীর অনুমোদনের জন্য এই বিদেশী কোম্পানির নামের অনুমোদন আগেই নিয়ে রাখার নিয়ম করে রাখা হয়েছে। বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানী করতে চাইলে প্রত্যেকটি পণ্য ও চালানের জন্য উৎপাদকদের মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেকবার ছাড়পত্র নিতে হবে। এটাও বিদ্যমান আইনের পুরোপুরি লঙ্ঘন। এভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো প্রতি পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানান এগ্রোকেমিক্যাল ব্যবসায়ী নেতারা।

দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতারা জানান, দেশীয় কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য আমদানীকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। এই শর্তের কারণে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় বাজারের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে। এই শর্ত প্রচলিত আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই ধরনের শর্তের কারণে দেশীয় কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক বাজার যাচাইয়ের কোনো সুযোগ থাকছে না। তাই দেশীয় পেস্টিসাইড কোম্পানিগুলোকে অত্যন্ত চড়া মুল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান। এতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। এসব করা হয়েছে শুধুমাত্র একটি মহল বিশেষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। আর এর সুযোগ নিচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তারা একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা এদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। 

এ অবস্থায় দেশীয় পেস্টিসাইড কোম্পানিগুলোর বিকাশ এবং দেশের টাকা দেশেই রাখতে PTAC (পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারী কমিটি) এর বৈষম্যমুলক প্রতিবন্ধকতা দূর করা জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে জানান কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিদেশী সোর্স উন্মুক্ত থাকায় দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামুলক দামে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। এ কারণে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো আমাদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ওষুধ রপ্তানি করতে পারছে। ফলে দেশে সেরা ২০ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মধ্যে প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি উঠে এসেছে। অথচ কৃষি দেশে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ছে শুধুমাত্র বৈষম্যমুলক বিধির কারণে। যার একতরফা সুযোগ নিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। এজন্য দেশীয় উদ্যোক্তারা কৃষি শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত দেশীয় কৃষি শিল্প বিকাশে নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অন্যান্য শিল্পের মতোই দ্রুত বিকাশ হচ্ছে তাদের দেশীয় কৃষি শিল্প। 

এগ্রোকেমিক্যাল ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বার্থে দেশীয় কৃষি শিল্প বিকাশের জন্য সকল অন্তরায় দূর হওয়া প্রয়োজন। এজন্য দেশীয় কৃষি শিল্প বিকাশের অন্তরায়গুলো দূর করার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত করার আহ্বান জানান তারা।

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল