নতুন ঘর
নতুন ঘরে পা রাখতেই চমকে ওঠে মেয়েটি,
চমকাবেই তো,
আজন্ম লালিত সপ্নের সাথে,
বাস্তবতার কি অদ্ভুত বৈপরীত্য!
হয়তো পিতার কাছে,
নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা ছিলো তার।
আধপেটা খেয়ে কতদিন কেটে গেছে,
একটামাত্র রুটি দিনান্তে ভাগ করে খেতো চার ভাই বোনে।
হয়তো মায়ের বাসন মাজা হাতে কড়া পড়ে যেতো
আর বাপের ঘামে ভেজা জামা থেকে বোটকা গন্ধ বের হতো।
অবশ্য মেয়েটার কাছে তা ছিলো ভিষণ আদুরে।
মা’র হাত দুটোকে মনে হতো
ধোঁয়া ওঠা এক বাটি পায়েস,
বাপের কাজের জামাটা ছিলো
হাসনাহেনার গন্ধের মতো মায়ায় ভরা।
মেয়েটা কাপড় শুকোতে দেবার ছলে,
বাপের জামাখানা প্রাণভরে শুঁকে নিতো।
মনে হতো আরব সাগর থেকে ভেসে আসা
ঠান্ডা হাওয়ার মতো।
মা হাসতেন আর বলতেন,
আমার বাপ সোহাগি কন্যা,
শশুরবাড়ি যেয়ে বাপকে ছেড়ে
থাকতে পারবি তো?
ঈদে -পার্বণে পুরনো জামা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরতে হতো,
প্রতিবছর নতুন জামা কেনার সাধ্য ছিলো না তাদের।
তবুও মেয়েটা স্বপ্ন দেখতো,
সবাই যেমন দেখে।
একদিন এক রাজপুত্তুর আসবে
আর তাকে নিয়ে যাবে রাজমহলে।
এই ভিষণ পুরনো স্বপ্নটা,
বাপ সোহাগি মেয়েরা দেখতে ভালোবাসে।
তারা রানী হয়ে যায়
আর নিজের, চারপাশে বিছিয়ে দেয়,
সপ্নের মায়াবী চাদর।
একদিন সবার অগোচরে,
স্বপ্ন থেকে উঠে আসে মায়াবী রাজপুত্তুর
আর জাঁকিয়ে বসে মেয়েটার বাস্তবতায়।
হঠাৎ করেই বাপের জামার গন্ধ
বড্ড বোটকা লাগতে শুরু করে,
মায়ের হাত দুটোকে মনে হয় শিরিশ কাগজ।
রাজমহলে যাবার নেশায়,
একটামাত্র রুটিকে ভাগ করে খাওয়াটা
তার কাছে অসহ্য লাগে।
সে তখন এখানে নেই, অন্য কোনো ভুবনে।
এরপরের গল্পটা খুব সাদাসিধে।
বাপ-মার মতে বা অমতে,
রাজপুত্তুরের হাত ধরে সটান গিয়ে দাঁড়ায়
নতুন ঘরের সামনে।
আর দেখে?
তার জন্যে অপেক্ষা করছে,
ঘামে ভেজা, বোটকা গন্ধ মাখা জামা,
একটা কাপড় কাঁচা সাবান
আর এক ঝুড়ি এঁটো বাসনের পাশে,
এক মুঠো ছাই।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৯ ডিসেম্বর ২০২১।