জীবন হক: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামীলীগ মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী সুব্রত কুমার বর্মণের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। চতুর্থ ধাপে ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়ন থেকে নৌকা মার্কায় অংশ নিচ্ছেন তিনি।
ভোটারদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান সুব্রত চলতি মেয়াদে ভোটারদের বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেয়ার নামে এসকল টাকা আত্মসাৎ করেছে। অনেককে বিভিন্ন রকমের ফাদে ফেলেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
আকচা ইউনিয়নের দিনমজুর রমজান আলী বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে এই ইউনিয়নের একজন ভূমিহীন বাসিন্দা। যখন জানতে পারলাম আমাদের থাকার ঘর দেয়া হবে, তখন আমি দ্রুতই চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করি, কিন্তু নিরাশ হই। অনেক ধনীদের ঘর দিয়েছে কিন্তু আমাকে দেয়না।
পরে চেয়ারম্যানের ডান হাত সুবেদ আমাকে টাকা দিতে বলে। ৫০ হাজার টাকা দিলে নাকি ঘর পাওয়া যাবে। আমার একমাত্র নিজের সম্বল ছিলো দুইটা ছাগল। আমি সেগুলো বিক্রি করে তাকে ২০ হাজার টাকা দেই বাকিটা ঘরে উঠার পর। আমাকে দেখে আরও চারজন একই পরিমান করে টাকা দেয়। কিন্তু আমাদের আর ঘর দেয়নি। টাকাও ফেরত দিচ্ছেনা। চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে চাইলেই শুধু বলে কয়দিন পরে আসো।
আকচার সর্দার পারার বাসিন্দা ফেন্সি বেগম বলেন, আমাকে সরকারি ঘর দেবার কথা বলে চেয়ারম্যান ২৪ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু ঘর দেয়নি। বলতেছে পরের বাজেটে দিবো। কিন্তু মানুষ বলতেছে নতুন করে ঘর নাকি আর বানানো হবেনা। তাই টাকা ফেরত চাইছি, টাকা ফেরত দিচ্ছে না। আমি এখন শুধু টাকা ফেরত চাই।
আকচা ইউনিয়নের বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন জানান, সুব্রত চেয়ারম্যান সরকারি ঘর দেবার নাম করে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এতো পরিমানে সরকারি ঘর না থাকায় বিপাকে পরেছে। সে সময় যেকেউ টাকা নিয়ে গেলেই ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতো কিন্তু এখন ঘর দিতে না পারায় সবাই ক্ষেপে গেছে।
সারোয়ার বলেন,শুধু ঘর দেওয়া নয়, আকচা ইউনিয়নের অনেক যুবককে চাকুরী দেবার নাম করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সুব্রত। আমার এলাকার ইসরাফিল নামের এক ছেলের বাবা জমি বিক্রি করে সাত লক্ষ টাকা দিয়েছে। কিন্তু চাকরি পায়নি সেই যুবক। এখন টাকাও দিচ্ছে না। এমন অনেকের কাছে টাকা নিয়েছে সুব্রত।
আকচা ইউনিয়নের গরীব এক কৃষক করকটু বলেন, আমার ভাইয়ের বউকে বুদ্ধি দিয়ে আমার নামে মামলা করিয়েছে সুব্রত। পরে সেই মামলা মিমাংসার জন্যে আমার কাছে এক লক্ষ টাকা নিয়েছে। কিন্তু মামলা আর মিমাংসা করে দেয়নি। টাকা ফেরত চাইলে আজকাল করে শুধু ঘুরাচ্ছে। আমি যখন টাকা চাইতে যাই তখন হাটখোলার এক ছেলে চাকরি বাবদ দেয়া ১৫ লক্ষ টাকা ফেরত চাইতে গেছিলো। এমন অনেকেই তার কাছে টাকা পাবে।
তবে বিষয়টি নিয়ে সেই ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রতর সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি দেখা করতে রাজি হননি। পরে মুঠোফোনে সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, আমি এদের কাউকে চিনিনা।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ইউএনও আবু তাহের মোহাম্মদ সামসুজ্জামান জানান, টাকার বিনিময়ে সরকারি ঘর দেওয়ায় কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখা হবে।
সময় জার্নাল/এলআর