গোলাম আজম খান, কক্সবাজার: ডিসেম্বর মাস থেকেই পর্যটকে সরগরম কক্সবাজার। শুক্রবার-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এখানে পর্যটকের আনাগোনা লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যায়। সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতেও অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক থাকে। এরমধ্যে ১৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিজয় দিবসের ছুটি। দুই দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুুটি। সে হিসাবে ১৬ থেকে ১৮ ডিসেম্বর টানা তিন দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ছুটি কাটাতে চলে এসেছে সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজারে। গত প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে ৯৫ শতাংশ হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে কক্সবাজারে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটের পর্যটকবাহী ৮টি জাহাজের টিকেট শেষ।
এই ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজার, এমনটাই জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
বিশেষ করে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শহর কক্সবাজারে আগেভাগেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। গত বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে পুরো সৈকত লোকে লোকারণ্য। সবাই মেতে আছেন আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে।
সরজমিনে দেখা যায়, সৈকতের উপকূলে আছড়ে পড়ছে একের পর এক ঢেউ। ঢেউয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। ধীরে ধীরে সাগর পানে ডুবে যাচ্ছে সূর্য, বাড়ছে রক্তিম আভা। এই দৃশ্য সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছেন লাখো ভ্রমণপিপাসু।
বিকেল নামতেই সাগরতীরে উপচে পড়া ভিড়। সবাই মেতেছেন সাগরের জলরাশিতে। সঙ্গে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যাস্ত।
টঙ্গি থেকে আসা নব-দম্পতি রিয়াদ ও জায়রা বলেন, টানা ছুটিতে ভিড় অনেক বাড়বে। তাই আগেভাগেই চলে আসলাম। বিকেলে সৈকতে নেমে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে দুজনেরই বেশ ভালো লাগছে। এমন দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ।
লাবণী পয়েন্টে ঘুরে বেড়ানো পুরান ঢাকার বাসিন্দা ইয়াছিন খাতুন বলেন, সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয় সংসার ও কর্মজীবন নিয়ে। তাই টানা ছুটিতে দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে কক্সবাজার ছুটে আসলাম। শীত মৌসুমে কক্সবাজার সৈকতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য খুবই ভালো লাগছে।
আরেক নুরুলদীন বলেন, ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যাচ্ছে সাগরে। এই দৃশ্য আগে কোনোদিন দেখিনি। প্রথম এই দৃশ্য অবলোকন করে মনটা আনন্দে ভরে গেল।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারের প্রায় ৫শ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে দেড় লাখ পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। বিজয় দিবসের ছুটি উপলক্ষে আগামী তিন দিনের জন্য শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে, বাকি ৫ ভাগ কক্ষ ‘বিশেষ’ অতিথিদের জন্য খালি রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, বিজয় দিবসের টানা সরকারি ছুটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের হোটেলগুলোতে বুকিং প্রায় শেষ। এছাড়া আগামী ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর এবং ৩০, ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দিনগুলোর জন্যও আগাম বুকিং শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, বিজয় দিবসের ছুটি উপলক্ষে সেন্টমার্টিনের জাহাজ ও হোটেলগুলোতেও আগামী চারদিন পর্যন্ত বুকিং শেষ। বর্তমানে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ৭টি এবং কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে একটি করে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য ভ্রমণ পিপাসু হাজারো মানুষ কক্সবাজারমুখী হচ্ছেন। আর তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা পর্যটন কেন্দ্র ও সড়ক মহাসড়কে টহল জোরদারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, আগত পর্যটকদের হয়রানি করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ধারণ ক্ষমতার বাইরে পর্যটক চলে আসলে তাদের জন্য অগ্রিম জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করি, পর্যটক নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলো উপভোগ করতে পারবে।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, লাখো পর্যটকের ভিড়ে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির পর্যটন সেলের সদস্যরাও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সৈকতে দায়িত্ব পালন করবে।
মহান বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক মিলে টানা ৩ দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে ৪ লাখেরও বেশি পর্যটকের সমাগম হবে বলে জানিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
এমআই