পৃথিবীটা
পৃথিবীতে শেষ বলে কিছু নেই, আছে কি?
সীমানা চিহ্নিত কাঁটাতার, তারপর-
আরও দূর, বহুদূর, যতদূর দৃষ্টি প্রসারিত,
সবেতেই এক রঙ, এক রূপ, একই কুয়াশার বেড়াজালে আবৃত।
পৃথিবীটা মস্ত একটা দেশ।
টসটসে কমলালেবুর মতো, উত্তর-দক্ষিনে সামান্য চ্যাপ্টা।
পৃথিবীটা কমলালেবুর মতো দেশ।
ধানক্ষেত, গমক্ষেত, দ্রাক্ষার ঝোপ,
জলপাইয়ের সবুজ বনানী ছেড়ে,
আরও দূর হেঁটে যাও,
রকমারি ফসলের সোনালী আমন্ত্রণ।
যেখানেই পৌঁছাবে, সেখানেই মানুষের মিছিল।
যেখানে নদীর কূল, সেখানেই গ্রাম।
ঘরবাড়ি, গৃহস্থালি, মায়ের মুখচ্ছবি মিলেমিশে একাকার।
কমলালেবুর মতো গোলগাল গ্রহটাতে,
যেখানেই মা থাকেন, সেখানেই মমতা।
ঝাঁক বাঁধা সারসেরা উড়ে যায়,
কাঁটাতার, সীমানা প্রাচীর কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র,
ভিষণ অবান্তর নীলাকাশে মেলে দেওয়া,
ছোট্ট, মিষ্টি দুটো ডানার কাছে।
যদি দেখো বহুজাতিক সম্মেলন শেষে
কাতারে কাতারে লোকে ঘরে ফেরে,
সবাই যে যার দেশে ধাবমান,
পরিজন, পরিবেশ, মাতৃভূমির টান।
উড়োজাহাজের পেটের ভিতর বসে
পাখির চোখে এই গ্রহটাকে দেখো,
দেশ, কাল, সীমানার প্রাচীর ডিঙিয়ে।
যেন সবেতেই এক রূপ সবুজ আর নীলের মিশেল।
পৃথিবীটা মস্ত বড়ো এক জনপদ।
যেখানেই পা রাখো, সেখানেই প্রিয়জন, মানুষের মুখ।
যে গৃহেই পা রাখো শিশুদের কলরব, একই চেনা সুখ।
ইবনে বতুতা হয়ে একবার ঘুরে এসো পৃথিবীর বুকে,
দেখবে এখানে পুত্রশোকে কাতর পিতার আহাজারি
কিংবা প্রসব বেদনার যন্ত্রণায় কাতর মায়ের কাতরানি,
একই সুরে কানে বাজে, একই আবেদন।
পৃথিবীর কোনো বাঁশি বা সানাই
এতো করুণ সুর বাজাতে পারেনি কখনো।
যুদ্ধ ফেরত বিজয়ী পুত্রের ঘরে ফেরার আনন্দ
কিংবা উদরছেঁড়া সোনা মানিকের সশব্দ উপস্থিতি,
যে আবেগের ঝংকার তোলে,
পৃথিবীর কোনো সরোদ,
এতো আনন্দ সুর শোনাতে পারেনি কখনো।
এই অনুভূতিগুলো ছড়িয়ে আছে,
একই রূপে, একই রঙে, একই ঢঙে,
কমলালেবুর মতো মস্ত এই গ্রহটা জুড়ে।
এখানে উনুনগুলোর তাপ একই উষ্ণতা ছড়ায়,
এখানে বৃষ্টির স্নিগ্ধতা নতুন প্রাণের জন্ম দেয়,
পৃথিবীর গায়ে ছড়িয়ে পড়ে সজীবতা।
কমলালেবুর গায়ে সবুজের চাষ।
এসো হে দেশ অথবা দেশহীন আদম সম্প্রদায়,
আমরা মুখোমুখি বসি।
একবার বুঝে নেই পিতৃ পরিচয়,
একবার স্মরণ করি পিতা আদমকে,
তাঁর এক ও অদ্বিতীয় স্রস্টাকে
আর সিজদাবনত হই শ্রেষ্ঠত্বের মহা সম্মান নিয়ে,
বিনয়ের সাথে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৬ ডিসেম্বর ২০২১।
