ইসাহাক আলী, নাটোর প্রতিনিধি:
২১ ডিসেম্বর। নাটোর মুক্ত দিবস। নাটোরের মানুষ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের স্বাদ পায় ১৬ ডিসেম্বরের চারদিন পর।
১৬ ডিসেম্বর সারা দেশে পাকসেনাদের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হলেও নাটোরে বিজয় আসে ২১ ডিসেম্বর। একাত্তরে নাটোর ছিল পাকসেনাদের ২নং সামরিক হেডকোয়াটার। তৎকালীন সিও অফিসে (বর্তমানের ইউএনও অফিস) পাকসেনাদের সামরিক হেডকোয়াটার স্থাপন করা হয়। ফলে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পাকসেনারা ১৬ ডিসেম্বর থেকে নাটোরে এসে জড়ো হতে থাকে। নাটোর পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, এনএস কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরের (উত্তরা গণভবন) ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া পাকসেনারা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলেও নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরে আত্মসমর্পনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় ২১ ডিসেম্বর। পাকসেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ মিত্রবাহিনীর ১৬৫ মাউনটেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পন করেন। এদিন পাকিস্তানী বাহিনীর ১৫১ অফিসার, ১৯৮ জন জেসিও, ৫৫০০ সেনা, ১৮৫৬ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য এবং ৯ টি ট্যাংক, ২৫ টি কামান ও ১০ হাজার ৭৭৩ টি ছোট অস্ত্র সহ আত্মসমপর্ন করে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নাটোরে বড় ধরনের কোন লড়াই না হলেও একাধিকস্থানে গনহত্যা চালানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী, দত্তপাড়া, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্্ির, শুকলপট্রি, মল্লি¬কহাটি, বড়াইগ্রামের বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ি, সিংড়ার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরে গনহত্যা চালায়। ৭১’এর ৩ জুন নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংস ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। এসব স্থানে স্থানীয়ভাবে শহীদদের স্মরনে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও ৪৩ বছরেও সরকারী স্বীকৃতি মেলেনি। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং অযতœ ও অবহেলায় ৭১’এর গণকবরগুলো নষ্ট হচ্ছে।
অপরদিকে ১৯৭১ থেকে ২০২১ দীর্ঘ সময় পার হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করছে জাতি। তবে দীর্ঘ ৫০ বছরেও নাটোরের গণকবরগুলো পায়নি কোন সরকারী স্বীকৃতি। কোন কোন গণকবরে স্থানীয়ভাবে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও অনেক গণকবর থেকে গেছে অরক্ষিত। এছাড়া ২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস পালনে তেমন কোন সরকারী উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বেসরকারী ভাবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয়ে আসছে সম্প্রতি। তবে দিনটিকে পালনে সরকারী উদ্যোগ গ্রহনের দাবি উঠে আসছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ এমন দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সরকারের নজরে আনতে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সময় জার্নাল/এলআর