নিজস্ব প্রতিনিধি: হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য সুস্বাদু খেজুরের রস। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুময় খেজুর গাছ এখন আর দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। দেখা মেলে না শীতের মৌসুম শুরু হতেই খেজুরের রস আহরণে গাছিদের তোড়জোড়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামীণ জনপদে শীতের উৎসব শুরু হতো খেজুর গাছের রস দিয়ে। শীতের মৌসুম শুরু হতেই সারাবছর অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর বেড়ে যেতোো। বাড়িতে বাড়িতে লেগেই থাকতো পিঠাপুলির উৎসব। পাঠানো হতো আত্মীয় স্বজনদের বাড়িও।
তবে দাউদকান্দির গ্রামাঞ্চলের সেই চিত্র এখন আর চোখে পড়ে না। এখন আর আগের মত খেজুরের রসও নেই, নেই সে পিঠে পায়েসও। দিন দিন কমে যাচ্ছে গাছের সংখ্যাও। নেই নতুন গাছ রোপণের কোনো উদ্যোগ।
চক্রতলা গ্রামের বৃদ্ধ বলেন, আগে গ্রামে-গ্রামে খেজুর গাছের মাথায় মাটির হাঁড়ি বেঁধে রাখা দেখে মন জুড়িয়ে যেতো। মাত্র এক দশক আগেও উপজেলার গ্রামগুলোতে শীতের সকালে চোখে পড়তো রসের হাঁড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাঁকডাক দিতেন। এখন আর সে দৃশ্য চোখে পড়ে না।
বিটেশ্বর গ্রামের গাছি ইয়াকুব বলেন, আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো। যা দিয়ে বছরের আরও কয়েক মাস সংসারের খরচ চলতো। বিটেশ্বর গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বুড়ো হয়ে যাওয়ায় রস তেমন পাওয়া যায় না। রস বাজারে বিক্রির মতো আগের সেই অবস্থা নেই।
তিনি আরও বলেন, এই তো কয়েক বছর আগে এক হাঁড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ৪০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।
মোহাম্মদপুর গ্রামের শফিউল্লা মুন্সী বলেন, কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনিরা তো আর সেই দুধ-চিতই, পুলি-পায়েস খেতে পায় না। তবুও ছিটেফোঁটা তাদেরও কিছু দিতে হয়। তাই যে কয়টি গাছ আছে তা থেকেই রস, গুড়, পিঠাপুলির আয়োজন করি।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক প্রাপ্ত মতিন সৈকত বলেন, মাটির নিচের জল এবং মাটির আদ্রতা কমে যাওয়ায় খেজুর গাছে আগের তুলনায় রস কম সংগ্রহ হচ্ছে। যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে ওঠায়, ভূপৃষ্ঠের রূপ পরিবর্তন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপণ করলে এর চাষ বাড়ানো সম্ভব। একই সঙ্গে গাছিদের প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা দিয়ে খেজুর রস আহরণে উৎসাহিত করাও প্রয়োজন।
সময় জার্নাল/এলআর