আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্তের পর বিশ্বের বহু দেশে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। করোনার নতুন এই ধরনের কারণে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে সতর্ক করতে সরব হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনাঢ্য ব্যক্তি বিল গেটস।
তার আশঙ্কা, দেশে দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে সমগ্র বিশ্ব হয়তো করোনা মহামারির সবচেয়ে খারাপ অংশে প্রবেশ করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে নিজের আসন্ন ছুটির দিনের বেশিরভাগ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টুইটারে দেওয়া সিরিজ টুইটে একথা জানান বিল গেটস। টুইটারে দেওয়া এসব বার্তায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেন, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ক্রমবর্ধমান ভাবেই করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর তাই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অনুসরণকারীদের প্রতি তার পরামর্শ -‘আমাদেরকে এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে যে, আমরা করোনা মহামারির সবচেয়ে খারাপ অংশে প্রবেশ করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওমিক্রন ইতিহাসের যেকোনো ভাইরাসের চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি শিগগিরই বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ছড়িয়ে পড়বে।’
পরে আরেকটি টুইটে বিল গেটস জানান, ‘ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তি ঠিক কতটা অসুস্থ হবে, সেটি আমরা ঠিক জানি না। এমনকি ওমিক্রন যদি ডেল্টার তুলনায় মাত্র অর্ধেক মাত্রায়ও ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তাহলেও সেটি ইতিহাসের সবেচেয়ে বেশি সংক্রামক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। কারণ করোনার এই ভ্যারিয়েন্টটি খুবই সংক্রামক।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিল গেটস যখন এমন এক সময়ে এই কথাগুলো বললেন যখন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে করোনায় আক্রান্তদের ৭৩ শতাংশেরও বেশি মানুষ ভাইরাসের নতুন ধরনের কারণে সংক্রমিত হয়েছেন। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ওমিক্রনে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশ থেকে একলাফে ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিনিদের টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এমনকি টিকার উভয় ডোজ সম্পন্ন করা ব্যক্তিদের বুস্টার ডোজ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অনেকটা একই সুর উঠে এসেছে বিল গেটসের টুইটেও।
মাইক্রোসফটের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতার ভাষায়, ‘করোনা টিকার বুস্টার ডোজ সবচেয়ে ভালো সুরক্ষা দেয়।’
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে করোনভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা আবারও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
মঙ্গলবার দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৩৮ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৮১১ জন। এছাড়া করোনা মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫ কোটি ২২ লাখ ৫১ হাজার ২৭৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮ লাখ ৩০ হাজার ৯৯০ জন মারা গেছেন।
আর সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতেই বাড়ছে উদ্বেগ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে করোনায় আক্রান্তদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত।
মার্কিন সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, এ পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি ৪০ লাখ বা ৬১ শতাংশ মার্কিনি সম্পূর্ণরূপে টিকা নিয়েছেন। ২০২১ সালের শুরুতে এই হার ছিল ১ শতাংশেরও কম।
এছাড়া এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষ টিকার বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকার বুস্টার ডোজ বেশ কার্যকারী।
এমআই