রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ কে যে কোথায় কবে দেবে

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ কে যে কোথায় কবে দেবে

ডা. জয়নাল আবেদীন :

একটা দেশ কতটা সভ্য ও উন্নত এবং কতখানি বসবাসের যোগ্য সেটা সে দেশের জিডিপি, গগনচুম্বি অট্টালিকা, মাথাপিছু আয় অথবা রেমিটেন্স দিয়ে পরিমাপ হয় না। কতটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কতটা মসজিদ-মাদ্রাসা মন্দির ও গির্জা সেটাও তার মাপকাঠি না। মাটির উপরে ও নিচে কেমন ধণ সম্পদ আছে তাও পুরো চিত্র প্রকাশ করে না।

একটা দেশ কতখানি সভ্য, উন্নত ও বসবাসের যোগ্য সেটা নির্ধারণ করে দেশের সংখ্যাগুরু ও সবলরা সংখ্যালঘু ও দুর্বলদের প্রতি কতটা সদয় তার ওপর।

দুনিয়াজুড়ে সবল ও দুর্বলের সংজ্ঞা প্রায় একই। প্রতিটা দেশেই মানুষ হচ্ছে সবল, পশু পাখি হচ্ছে দুর্বল। প্রতিটা দেশেই সংখ্যাগুরু হচ্ছে সবল, সংখ্যালঘু হচ্ছে দুর্বল। প্রত্যেকটা দেশে নারী-পুরুষের মিলিত সংখ্যা হচ্ছে সবল আর এর বাইরে যত লিংগের মানুষ আছে তারা হলো দুর্বল। আর জগতের শুরু থেকেই সবখানে পুরুষ হচ্ছে সবল, নারী দুর্বল।

কোনো ডাটা দরকার নেই, দরকার নেই কোনো ফিচার ও আর্টিকেল পড়ার। আজকে, এই মুহূর্তে আপনাকে যদি পরিবারসহ বাকি জীবন কাটানোর জন্য কোনো একটা দেশকে বাছাই করতে দিলে আপনি যে দেশটা সিলেক্ট করবেন সেই দেশের ক্রাইটেরিয়াগুলো কী হবে?

আমি আপনার চয়েজ না জেনেই বলে দিচ্ছি কী হবে। হয়তো শতভাগ মিলবে না, কোনো ফ্যাক্টরই কোথাও শতভাগ মিলে না। তবে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ফ্যাক্ট মিলবে।

সেই দেশের মানুষ প্রাণী অধিকারের প্রতি সোচ্চার। কেউ কুকুর-বিড়াল-পাখি নিয়ে কাজ করলে তারা দাঁত কেলিয়ে বলে না, মানুষের নাই ঠিক আবার আইছে পশুপ্রেমিক!

সেই দেশের মানুষ সংখ্যালঘুর মসজিদ-মন্দিরে হামলা করে না। মূল ধারার মানুষের চেহারার বাইরেও যে ভিন্ন চেহারার মানুষ দেশে থাকতে পারে সেটা মানে। একটু নাক বোঁচা দেখলেই অভদ্রের মতো বলে না, তোমরা কী সাপ খাও? ব্যাঙ! খ্যাক খ্যাক!

সেই দেশের মানুষ নারী পুরুষ ছাড়াও যে জগতে আরো কিছু ভিন্ন মানুষ থাকতে পারে সেটা বিশ্বাস করে এবং তাদের সমান মর্ক্সাদা দানের চেষ্টা করে।

আর হ্যাঁ, অতি অবশ্যই তারা নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে। কোথাও রেইপ হলে সেটাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে না।

রেইপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্রাইম ফ্যাক্টর। পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধেই রেইপ হয়। একটা যুদ্ধে এক পক্ষের সেনা অপর পক্ষের সেনা মারবে; এটাই তো নিয়ম হবার কথা। তাহলে রেইপ হয় কেন? রেইপ তো যুদ্ধ জয়ের কোনো উপাদান না।

যৌন চাহিদার জন্য?

জ্বি না। রেইপ করা হয় এটা বোঝাতে, এই দেখো আমরা শক্তিশালী। আমরা তোমাদের উপর খবরদারির অধিকার রাখি। এই দেখো আমরা আমাদের ক্ষমতা, এবার বুঝো আমাদের দম্ভ!

আপনার দেশে রাস্তা ঘাটে বের হওয়া নারীরা যখন দেদারসে ধর্ষিত হবে, ধরে নিতে হবে এই দেশ নিরাপদ না। কেবল নারী না, দুর্বল কারো জন্যই নিরাপদ না। এই দেশ যুদ্ধের মতোই অস্থিতিশীল। রেইপ জ্বরের মতোই একটা লক্ষণ, নিজে যতটা না রোগ..তারচেয়ে অনেক বেশি অনেকগুলো রোগের লক্ষণ। ক্যান্সার, টিউমার, যক্ষা, জীবনঘাতী ইনফেকশন....

হ্যাঁ যেটা বলছিলাম...একেকটা রেইপ কেইস যখন সামনে আসে সেটা আসলে দেশের সামগ্রিক অবস্থাই প্রকাশ করে। কতগুলো চাঞ্চল্যকর রেইপের ঘটনা ঘটে গেল গত কয়েক বছরে। বন্ধ তো হচ্ছে না।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না তাই?

জ্বি না। চিন্তার পরিধি বড়ো করুন। জ্বরের জন্য দৃষ্টান্তমূলক এন্টিবায়োটিক দিয়ে হয়তো সেই জ্বরটাকে থামানো যাবে। কিন্তু ভেতরে যদি থাকে ক্যান্সার, ভেতরে যদি থাকে যক্ষা...৭ দিনের এন্টিবায়োটিকে সারা জীবনের জ্বর কমবে না।

বছরে নিয়ম করে একেকটা রেইপ ইস্যু আসে, নিউজফিড গরম হয়...তারপর সব ঠাণ্ডা। নিয়ম করে, একদম নিয়ম করে...

আসলে নিউজফিড গরম করেও লাভ নাই। এটা এমন একটা ক্রাইম, ক্ষমতার দম্ভ, সবল দুর্বলের বিভাজন, যে কোনো ভিন্নমতকে দলাচাপা এবং ভিক্টিম ব্লেইম...এসব ফ্যাক্টর যতদিন থাকবে...রেইপ কোনোদিন কমবে না। বছরে হাজারজনকে ফাঁসি দিলেও না। এই ফ্যাক্টটা যদি আপনি না বুঝেন, স্যরি টু সে...আপনার মানসিক বিকাশ এখনো পর্যাপ্ত হয়নি।

তাই বলে কি বিচার চাওয়া যাবে না?

অবশ্যই বিচার চাইতে হবে। যে অসুখ যখন আসে সেটার তাৎক্ষণিক প্রতিকার জরুরি। রোগীকে কোনো অবস্থাতেই পেইন ফিল করতে দেয়া যাবে না, নিরাময়ের চেষ্টা করতে হবে- এটা চিকিৎসাবিদ্যার বেসিক রুল। তাতে ভেতরে যত বড় রোগ থাকুক না কেন। যে কোনো ধর্ষণের বিচারও তাৎক্ষণিক হওয়া উচিত।

তবে ঐ এতক্ষণ যা বললাম, পারিবারিক যৌন নিগ্রহ কিংবা অন্যান্য ফ্যামেলিয়াল যৌন নিগ্রহ ছাড়া বাকি যেসব রেইপের ঘটনা ঘটে সেগুলোর মূল কারণ দেশের এন্ট্রপি বেড়ে যাওয়া। এনট্রপি বেড়ে যাওয়ার যতগুলো কারণ উপরে বললাম এবং তার বাইরে যে হাজারও ফ্যাক্টরস আছে তার কোনো একটায় যদি আপনার দায় থাকে, এসব ধর্ষণে আপনিও কোনো না কোনোভাবে দায় রাখেন।

পুরো দেশটাই একটা শরীর। দেশের প্রতিটা সমস্যা একেকটা রোগ। শরীরের এমন কোনো রোগ নেই যেটার প্রভাব পুরো শরীরের অন্য কোথাও পড়ে না। দেশের এমন কোনো সমস্যা নেই যা কোনো না কোনোভাবে অন্য সমস্যাকে ট্রিগার করে না।

আমাদের পুরো শরীরেরই তো সমস্যা।

সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুদ কে যে কোথায় কবে দেবে...

কে জানে! 

কেউ কী জানে? 


লেখক : চিকিৎসক ও কবি ও গল্পাকার



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল