কতদিন পরে দেখা
কতদিন পরে যেন আবার তোমার সাথে দেখা,
একটা আস্ত শহরের মাঝে,
রিকশার টুংটাং, ট্যাক্সির হর্ন
আর ট্রাফিক পুলিশের ঝাঁঝালো হুইসেলের মাঝে।
চারিদিকে ফেরিওয়ালা, ভিখারির হাঁকডাক,
কতো শত অচেনা মুখের সারি।
একটা হট্টগোলে ভরা আস্ত শহরের ঠিক মাঝখানে,
হঠাৎই তুমি আমায় ডাকলে।
তুমি ডাকলে, আমি থামলাম।
সেই জোড়া ভ্রুয়ের নীচে ঝকঝকে উজ্জ্বল চোখদুটি,
মুহূর্তের মধ্যে আমাকে নিয়ে গেলো
ফেলে আসা ছোট নদী, সেই মাঠ, সর্ষের ক্ষেত।
কতো আদরে আগলে রাখা দিনগুলো,
যেন হাজার বছর আগে তেপান্তরের ঠিক ঐ পারে,
যাকে চাইলেও আজ আর পেরোনো যাবে না কিছুতেই।
তুমি ডাকলে, আমি দেখলাম,
তোমার দীঘল চুলের পরে,
সাদা সাদা মেঘেদের ছোপ,
যেখানে কখনো ছিলো স্বর্ণচাঁপার গোছা আলগোছে।
ভেঙে গেছে টলটলে গালদুটো,
কন্ঠার হাড়খানা ভিষণ উগ্রভাবে জানান দিচ্ছে,
তুমি সময়ের পথটুকু কতটা পেরিয়ে এলে।
জরিদার ওড়নাটি প্রজাপতি আঁকা ছিলো,
সে আঁচলে ভরে যেতো বকুলের রাশি।
আজকে আঁচলখানা এ কেমন অদ্ভুত!
বিবর্ণ, পাংশুটে,
ঠিক যেন বর্ষার ছাইরঙা মেঘ।
তোমার বাড়িয়ে দেওয়া হাতদুটো ধরতেই,
সাদর সম্ভাষণ মিলিয়ে গেলো।
এ কেমন হাত বলো, খসখসে, রুক্ষ?
মনে হলো পুরনো সে জামরুল গাছ।
কোথায় হারিয়ে গেলো মাখন কোমল ত্বক?
দুপাশে দোলানো বেনী?
ছটফটে ছেলেবেলা?
কোন সে সুদূর?
খসখসে হাত ছুঁয়ে অন্তর কেঁদে মরে,
কোথায় হারালে তুমি মিষ্টি সে সই?
এতগুলো দিন পরে আবার যখন দেখা,
এতো চেনা, তবু কেন এতটা অচিন?
আমি একে চিনিনা তো,
এ আমার সই নয়,
আমার স্মৃতিতে যার আজীবন বাস,
সে আমার ছেলেবেলা, মেঠোপথে হেঁটে চলা,
একহাঁটু ধুলোমাখা, মাখন কোমল।
হঠাৎ চমকে উঠি, শিরশিরে শীতলতা,
শিরদাঁড়া দিয়ে যেন ঝাঁকি দিয়ে যায়।
আমার সামনে দেখি দিগন্ত বিস্তৃত একটা আয়না।
ভিষণ জনকোলাহলে ভরা মস্ত শহরটার মাঝখানে,
আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,
আমারই প্রতিবিম্ব।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৯ ডিসেম্বর ২০২১।