‘সকালের পত্রিকা দেখে’
আজ আমার মন খারাপের দিন
আমাকে কিচ্ছু বলোনা তো,
হৃদয়ে বইছে অনর্গল
অনিঃশেষ দুঃখ অবিরত।
কতজন ডুবলো স্রোতের ঘায়ে,
কতজন পুড়েই হলো শেষ,
ছিলো কি অসীম ঢেউয়ের মাঝে
অথচ আগুন ছুঁলো কেশ।
ঘরে মন বসছে না আজ কাজে,
কি যে ছাই বুকের ভেতর বাজে,
পরানে ধাক্কা দিয়ে যায়
হাহাকার মাঝ দরিয়ার মাঝে।
ছিলো সে মস্ত জাহাজখানা,
ইঞ্জিনে তেলও ছিলো ভরা,
নিশ্চয় সারেং ছিলো ভালো,
জানিনা যাত্রী ছিলো কারা।
হয়তো ছিলো ক'জন মা
বুকেতে জড়িয়ে কচিটাকে,
হয়তো নতুন বউও ছিলো
বরটা আগলে রাখে যাকে।
কতজন ছুটছিল গ্রাম পানে
সেখানে পথ চেয়ে রয় মা,
মরণের রাত্রি প্রভাত হলো
খোকা তার আর তো ফেরে না।
বাবাটার ফুরফুরে মন ছিলো
যাচ্ছিলো স্কুল ব্যাগ নিয়ে,
নিশ্চয় নদীর ঘাটে এসে
পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেয়ে।
ঘরে বউ ভাবছে রাত পোহালে
আসবে ভালোবাসার মুখ,
কতকাল রয়েছে দূরদেশে
ভাবতেই লাফিয়ে ওঠে বুক।
এতসব স্মৃতির বোঝা নিয়ে
আহারে মস্ত জাহাজখানা,
দরিয়ায় চলছিলো বেশ ভালো
হঠাৎই আগুন দিলো হানা।
ছিলো বেশ ঢেউয়ের পরে ভেসে
চারদিক পানিতে থইথই,
অথচ আগুন জ্বলে ছাই
বাঁচাবার রইলো না আর কেউ।
সকালের পত্রিকাটা দেখে
সারাদিন থমথমে আজ মন,
ভাবছি ফিরে যেতেই হবে
যাঁর হাতে মরণ আলিঙ্গন।
যাঁর হাতে এই জীবনের চাবি
তাঁরই কাছে করতে হবে দাবী,
যতসব বিপদ অবসান
করে দাও সর্বশক্তিমান।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৪ ডিসেম্বর ২০২১।