এম. পলাশ শরীফ, বাগেরহাট থেকে :
“পরের জায়গা পরের জমি ঘর বানাইয়া আমি রই, আমি তো সেই ঘরের মালিক নই” উপমহাদেশের বাংলা লোক সঙ্গীতের অবিসংবাদিত শিল্পী আব্দুল আলীমের এই পল্লীগীতি গানের মত মোংলা পোর্ট পৌরসভা বাস্তব অবস্থার রুপ নেবে, গানের গীতিকারও কি জানত? হয়ত বা জানতো না! কিন্তু কাকতলীয়ভাবে এই গানের মত হুবুহু অবস্থা হয়েছে তাই।
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় ২১ দশমিক ৩৩ বর্গকিলোমিটারের বর্তমান প্রথম শ্রেণীর “মোংলা পোর্ট পৌরসভা” প্রতিষ্ঠার পর পেরিয়ে গেছে ৪৬ বছর। এত বছর পরও এ পৌরসভার নিজস্ব জায়গার অভাবে কোনো ভবন হয়নি। পৌরসভার কার্যক্রম চলছে অন্যের বাড়িতে। ১৯৭৫ সালের ১ ডিসেম্বর বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকায় ২৭ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে চলে এ পৌরসভার কার্যক্রম। এভাবে কেটে যায় প্রায় ৩৬ বছর। প্রয়োজনীয় ৫২ শতাংশ জায়গা না থাকায় এখনও ভাড়ায় চলা ২৭ শতাংশ সেই জায়গায় হয়েছে পৌরসভার দ্বিতল ভবনের অত্যাধুনিক এসি মার্কেট। কিন্তু নাগরিক সেবায় এখনও নিজস্ব জায়গা না হওয়ায় পৌরসভার কার্যক্রম চলছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনতলা বিশিষ্ট জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত একটি ভবনে। যেটি একসময় বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের হাসপাতাল ছিল। জারাজীর্ণ ও ঝুঁকি হওয়ায় পরবর্তীতে সেটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পাওয়ার হাউস রোডস্থ অবস্থিত সেই ভবনে রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০ কক্ষবিশিষ্ট তিনতলা ভবনে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। ভবনটির দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশের্^ পাশের কক্ষে বসেন মেয়র, সচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলী। নিচতলার দক্ষিন পাশের্^ অফিস সহায়ক ও নাগরিক সনদপত্র দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ চলছে। হোল্ডিং, ট্যাক্স ও কর সেবা চলছে পূর্ব পাশের্^। আর উত্তর পাশের্^ ট্রেড লাইন্সেস ও কনঞ্জারভেন্সি কার্যক্রমসহ দক্ষিন পাশের্^ চলছে সিভিল প্রকৌশলীর ও পানি শাখার কার্যক্রম।
এখানে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের বসার ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকটি বেঞ্চ পাতা। ভবনের তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তরা খুলে পড়েছে। সামনের অংশে রড বের হয়ে গেছে। পিলারে ফাটল ধরেছে। অত্যান্ত জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি মাথায় নিয়েই এখানে কাজ করছেন মেয়রসহ ৩৫ জন স্থায়ী এবং ১০৫ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী।
পৌর ভবনের এই হাল দেখে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ আলী আজম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াসিম আরমান, আব্দুল জলিল ও কেয়া বেগম বলেন, এই উপজেলায় অন্য সব ইউনিয়নেও এর চেয়ে ভালো ভবন আছে। বর্তমানে পৌরসভার রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মত উল্লেখ করে এই বাসিন্দারা আরও বলেন-দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আমাদের পৌরসভায় বিভিন্ন কাজ নিয়ে যেতে হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান জানান, আমাদের অনেক দুঃখ! ৪৬ বছরেও আমরা পৌরসভার জন্য কোন স্থায়ী জায়গায় ভবন করতে পারি নাই। অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়ে নাগরিকদের সেবা করতে হচ্ছে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন- বিগত বছরে যারা মেয়র বা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা এ বিষয়ে কোন গুরুত্বই দেয়নি।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসে নাগরিক সেবা হুমকি জানিয়ে মেয়র শেখ আব্দুর রহমান আরও বলেন, এক লাখ ১০ হাজার নাগরিকদের “নতুন পৌর ভবনের জন্য ৫২ শতাংশ জায়গার প্রয়োজন। এই বছরের ফেব্রæয়ারীতে মেয়র নির্বচিত হওয়ার পর দায়িত্ব বুঝে নিয়ে আমি সেই জায়গার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। একপর্যায়ে জেলা প্রসাশকের কাছে ৫২ শতাংশ জায়গা চেয়ে আবেদনও করেছি। অন্যদিকে বিকল্প হিসেবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছেও জায়গার জন্য আবেদন জানিয়েছি। তারা আমাকে আশ^স্থ করেছেন। শিগরিরই এই জায়গা পেলে পৌরসভার নতুন ভবন করতে পারব”। তখন নাগরিক সেবার কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়বে বলেও জানান তিনি।
সময় জার্নাল/ইএইচ