শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

নীলফামারীতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ৬, ২০২২
নীলফামারীতে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়ম

খাদেমুল মোরসালিন শাকীর, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভুমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে এসব কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীরুল ইসলাম কাজে নিম্নমানের  উপকরণ ব্যবহারের বিষয় অস্বীকার কর বলেন, নিম্নমানের কিছু খোয়া প্রকল্প এলাকায় আসলেও পরে সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ১শ’ টি গৃহহীন পরিবারের বাড়ি নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে বাহাগিলি ইউনিয়নে ৩০ টি এবং বড়ভিটা ইউনিয়নে ৭০টি ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী গৃহনির্মাণ কাজের লে আউট প্রদানকালে অব্যশই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ,উপজেলা প্রকৌশলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং সম্ভব হলে পিআইসি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

কিন্তু প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভুমিহীনদের ঘর নির্মাণ কাজ চলমান থাকলেও প্রকল্প এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাকে চোঁখে পড়েনি। সরেজমিনে বাহাগিলি ইউনিয়নের কারবালার ডাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গৃহহীন ও ভুমিহীনদের গৃহনির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। গৃহনির্মাণ কাজের আরসিসি ঢালাইয়ে নিম্নমানের সালটু ইটের খোয়া দিয়ে ঢালাই কাজ চলমান রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ফাউন্ডেশন, বিম, এবং আরসিসি ঢালাই কাজে একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকার কথা কিন্তু ঢালাই কাজে কোন উপ-সহকারী প্রকৌশলী না থাকায় নির্মাণ শ্রমিকরা তাদের ইচ্ছেমতো ঢালাই কাজ সম্পন্ন করছেন।

এসময় প্রকল্প এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজমিস্ত্রি মনোয়ারুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, খোয়াগুলো নিম্নমানের  ঠিকআছে কিন্তু এগুলো আমরা ব্যবহার করছিনা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এগুলো খোয়া ফেরত পাঠাতে বলেছেন। কিন্তু তাঁরপরও এগুলো খোয়া ব্যবহার করছেন কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, খোয়া না থাকার কারণে এগুলা ব্যবহার করছি। কারণ খোয়া আসতে দেরি হলে আমার শ্রমিকরা বসে থাকবে।

বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর টটুয়ার ডাংগা প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রকল্প এলাকায় দ্রুত গতিতে এক সাথে ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক ভুমিহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ কাজ করছেন। কেউ ব্রককাটিং শেষে সিসি ঢালাই দিচ্ছেন। কেউ লেয়ারের গাথুনী করছেন, কেউ সলিং করছেন আবার কেউ কেউ গ্রেটবিম ঢালাই দিচ্ছেন। এসময় দেখা যায় সলিং ও গাঁধুনীর কাজে নিম্নমানের  ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঢালাই কাজের সিমেন্ট বালু খোয়ার অনুপাত এবং গুনগতমান প্রাক্কলন অনুযায়ী সম্পাদক করার জন্য একজন উপ- সহকারী কার্যসহকারী সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও সেখানে কাউকে দেখা যায়নি। 

প্রকল্প এলাকার রাজমিস্ত্রি রহমত মিয়া বলেন, ভাই আমরাতো ইট নিয়ে আসছিনা। ইট নিয়ে আসতেছে ইউএনও অফিসের নিয়োগ প্রাপ্ত মালী মাজেদুল হক চঞ্চল । ইট দুই নম্বর না এক নম্বর সেটা দেখা আমাদের দায়িত্ব নয় কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। কাজের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকতা উপস্থিত নাই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে একজন গ্রাম পুলিশ এসে কাজ দেখে যান। আবার কোন কোন সময় ইউএনও আসেন।

এদিকে উপজেলা নির্মাণ শ্রমিকের সভাপতি তহুবর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার এলাকার শ্রমিকদের হাতে কাজ না থাকায় তারা খেয়ে না খেয়ে আছে। তাদের পেটের ভাত মেরে বর্তমান ইউএনও অন্য জেলার শ্রমিক এনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ করছে। ওই এলাকার মৃত হরেন্দ্রনাথ অধিকারীর ছেলে ক্ষিতিষ চন্দ্র অধিকারী, মোকন্দ রায়ের ছেলে ধীরেন চন্দ্র রায়, বজরা বর্মণের ছেলে মহেশ বর্মণ ও নিরাশা বর্মণের ছেলে পলাশ চন্দ্র রায় জানান, মাঝে মধ্যে ইউএনও স্যার এখানে আসেন। আর কেউ এসব বাড়ি নির্মাণ কাজ দেখার জন্য আসে নাই। নিম্নমানের  ইট,খোয়া ও বালু দিয়ে কাজ না করার জন্য মিস্ত্রিদেরকে নিষেধ করেছি। ওনারা ইউএনওকে বলতে বলেছেন। কিন্ত ইউএনও স্যার কি আমাদের কথা শুনে?

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ:দা) নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ময়নুল হক জানান,আমি শুধু একদিন কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। আর কোন দিন যায়নি। নিম্নমানের  কাজের বিষয়ে তিনি ইউএনওর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীরুল ইসলাম ভুমিহীন ও গৃৃহহীনদের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের  খোয়া আনার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, খোয়াগুলো ব্যবহার করা হয়নি সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে। নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি কি নিম্নমানের  ইট চেনেন। 

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল