গোলাম আজম খান, কক্সবাজার। একটু উষ্ণতার খোঁজে পর্যটকদের ঢল নেমেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। সেখানে দিনের বেলায় তপ্ত বালুর তাপ নিতে পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে।
কনকনে শীতের মধ্যেও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।
সম্প্রতি কক্সবাজারে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারের দাম নিয়ে নৈরাজ্যের খবরে পর্যটন ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক পর্যটকের দেখা মিলছে না সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
তখন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) বেলা ১১ টার সময় সরেজমিনে দেখা গেছে, সুগন্ধা সী-ইন, লাবণী ও কলাতলি সমুদ্র সৈকতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে যেন সাগর তীর। যে যার মতো করে মেতে ওঠেন নোনাজলে। আবার অনেকের মন্তব্য, করোনার কারণে লকডাউনের আশঙ্কা অনেকে আগে ভাগেই যেন ঘুরে যাচ্ছেন বিশ্বের বৃহত্তম এ সমুদ্র সৈকত।
সৈকতে দিনের বেলায় শীতের তেমন প্রভাব পরে না। তাই সকাল ১০ টা থেকে বিকাল পর্যন্ত অনেকেই তপ্ত বালুতে গড়াগড়ি করে শরীরকে উষ্ণ করে নিচ্ছেন। এছাড়া, ঝাউবন, বালুকাবেলা, সৈকতের পাদদেশ, সমুদ্রস্নান দারুণ উপভোগ করছেন তারা।
পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সজাগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা।
সুগন্ধা পয়েন্টে আগত পর্যটক আবু সালেহ মুহাম্মদ নোমান বলেন, অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল কক্সবাজার আসব। কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি। তবে শত ব্যস্ততার মাঝেও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসতে পেরেছি, এটাই ভালো লাগছে।
আরেক পর্যটক রশিদা বেগম বলেন, সমুদ্রের নোনাজলে গা ভাসিয়ে আলাদা শান্তি পাওয়া যায়। দেশের অন্যান্য স্থান থেকে কক্সবাজারের সমুদ্রেই সবচেয়ে ভালো লাগে। তাই ছুটি নিয়ে বার বারই কক্সবাজার আসি। কক্সবাজারে একটা আলাদা প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
আরেক পর্যটক রিয়াদ আহমেদ বলেন, শীতের এই পরিবেশ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনেক ভালো লাগছে। কোনো জায়গায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। যার কারণে কক্সবাজার ঘুরে বেশ আনন্দ পাচ্ছি।
এদিকে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আশঙ্কায় দেওয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা। সামনে আবারও আসতে পারে লকডাউন। তাই আগেভাগে অনেকে ঘুরে যাচ্ছেন কক্সবাজার।
লাবণী পয়েন্টে আগত পর্যটক রুমিনা খান বলেন, করোনার বিধি-নিষেধ সামনে কঠোর হতে পারে। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে চলে এলাম। বেশ ভালোভাবে সমুদ্র সৈকতে গোসল ও ঘোরাঘুরি করছি স্বামী-সন্তান নিয়ে।
আরেক পর্যটক মিজানুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার আসার ইচ্ছা ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু দেখছি, করোনা যে হারে বাড়ছে, তাতে লকডাউন দিতে পারে। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে কেন্দ্র কক্সবাজার চলে এলাম। অনেক মানুষ, খুব ভালো লাগছে, বেশ আনন্দ করছি।
সমুদ্রস্নানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়িয়েছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা।
সি সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মো. শুক্কুর বলেন, নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে লাখেরও বেশি পর্যটকের সমাগম হয়েছে। সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট হতে কলাতলী পয়েন্টের সাগরতীর জুড়ে মানুষ আর মানুষ। সবাই বেশ মজা করছে, নোনাজলে গোসল করছে। তাই পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় ৩টি পয়েন্টেই লাইফ গার্ড কর্মীরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। যাতে পর্যটকরা কোনো ধরণের দুর্ঘটনার শিকার না হয়।
সৈকত ছাড়াও পর্যটকদের পদচারণয় মুখরিত এখন বিভিন্ন স্পটে। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটক আসতে শুরু করায় খুশি এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানালেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা।
শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়। ইনানী সৈকত, সেন্টমার্টিন, আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ির ঝর্ণা, ডুলহাজারা সাফারি পার্কসহ কক্সবাজার জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন মনের আনন্দে।
সময় জার্নাল/আরইউ