চল্লিশে
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
বয়স যখন চল্লিশ হয়, লোকে বলে তাকে চালশে,
সেই বেচারাও ঝিম ধরে থাকে, মন হয়ে পড়ে আলসে।
ভেবে নেয় আমি এইবার শেষ, আর বুঝি এগোবোনা,
উঠতে বসতে দীর্ঘশ্বাস, হতাশার দিন গোনা।
ঘুরে ফিরে দেখে দর্পণখানা, একগোছা কালো কেশ,
ভালোই তো ছিলো ক'বছর আগে,
কি করে তা হলো শেষ?
শিয়রের পরে চিকচিক করে ধবধবে সাদা চুল,
চল্লিশ পড়ে মহাসংকটে, পদে পদে হয় ভুল।
পাকা চুল? সে তো অভিজ্ঞতা, আভিজাত্যের নাম,
পাকা চুল মাথা বুদ্ধিতে ঠাসা, অমূল্য তার দাম।
চল্লিশে চোখ ম্লান হয়ে যায়, দূরকে দেখায় ঝাপসা,
চশমা লাগাও, ভিটামিন খাও সব হয়ে যাবে ফরসা।
বাহারি চশমা চোখে পরে নাও, মনে হবে তুমি কবি,
মুখখানা হবে অতুল কান্তি, সূর্যদয়ের রবি।
চল্লিশ এলেই হৈচৈ করে রোগব্যাধি হয় জড়ো,
খাদ্যে অরুচি, সারা গায়ে ব্যাথা, একটুও যদি নড়ো।
আঠারো, উনিশ টগবগে তাজা, চল্লিশ ভারি রোগা,
বাকি দিনগুলো পেটের অসুখ, সর্দি-কাশিতে ভোগা।
আসলে এসব বানোয়াট কথা, একেবারে তা বানানো,
এসব ছলায় চল্লিশকে ধরে বেঁধে আটকানো।
চল্লিশ, সে তো বয়সী বটের আলো ঝিলমিল ছায়া,
চল্লিশ জানে মমতা বিলাতে, চল্লিশ জানে মায়া।
কতো দিন, কতো প্রহর, বর্ষ, যুগ পার করে এসে,
অভিজ্ঞতা ধাতস্থ হয় পা রেখে চল্লিশে।
সেই তো জানে, জীবনের মানে, বেঁচে থাকা কাকে বলে,
সমৃদ্ধির চাবি আছে কোথা, কোন অজ্ঞাত কলে?
এতকাল শুধু শিখেই এসেছে, দেখেছে বিশ্বলোক,
সব জানা নিয়ে ছোটা হবে শুরু যতদূর যায় চোখ।
চল্লিশ সে তো তারুণ্যে ভরা, অপূর্ব সুসময়!
এ বয়সে প্রাণে প্রাণ জেগে ওঠে, অদম্য প্রত্যয়।
এতটা বছর পৃথিবীর দান নিয়েছে দু'হাতে তুলে,
এবার সময় তারই বিনিময়, যা আছে জ্ঞানের মূলে।
সেই কতো আগে পাতকের বাগে, মরু গিরি গহ্বর,
চল্লিশে এলো সত্যের আলো ঘুচাতে অন্ধকার।
চল্লিশ থেকে শুরু হয়ে গেলো মরিচা তোলার দিন,
চল্লিশ সে তো বয়স নয়গো,জাতির আজন্ম ঋণ।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৬ জানুয়ারি ২০২২।