নাদিম মাহমুদঃ শাবির শিক্ষার্থীরা যে হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে পিটুনি খেলেন, সেই হল প্রাধ্যক্ষের একাডেমিক কর্মকাণ্ড দেখে সত্যি অসহায় লাগছে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ হলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজা। শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক ব্যবহারের পর শাবির শিক্ষার্থীরা তো দাবি তুলেছিল, তার পদত্যাগের, এখন এই চৌর্যবৃত্তির তথ্য দেখার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দিবে কি না, তা আমি দেখতে চাই।
আমি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট ঘুরে তার দেয়া দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তার সর্বশেষ জার্নাল অব এনার্জি রিসার্স অ্যান্ড রিভিউ তে প্রকাশিত Solar Park: The Next Generation Energy Source in Bangladesh শিরোনামে প্রবন্ধটি পড়ছিলাম। তিনি সহ ওই প্রবন্ধটির সহ লেখক ছিলেন, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম।
গত ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে প্রকাশিত এই আর্টিকেলটি চৌর্যবৃত্তির সীমা পরিসীমায় গিয়ে ঠেকেছে। বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে হুবুহু তুলে দেয়া বাক্যে নিয়ে সাজানো এমন গবেষণা প্রবন্ধকে কখনোই একাডেমিক আর্টিকেল হিসেবে ধরা যাবে না, বরং সেটিকে প্লেগারেজিমের দায়ে দুষ্ট হতে হয়। একাডেমিকভাবে শাস্তি পেতে হয়। এগারপাতার এই প্রবন্ধটি কয়েক পাতা জুড়ে চুরির দৃশ্য দেখার পর বাকিগুলো আর পড়ার ইচ্ছে হয়নি। প্রথম পাতার এক তৃতীংশের বেশি লেখাটি চুরি করা হয়েছে তিনটি আর্টিকেল/ওয়েব সাইট থেকে।
দ্বিতীয় পৃষ্ঠার অর্ধেকের বেশি চুরি করা হয়েছে, উইকিপিডিয়া থেকে। প্রতিটি শব্দ, বাক্য হুবুহু কপি পেস্ট করে এমন প্রকাশনার আদৌও সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। জার্নাল, ওয়েব সাইট, বই যেকোন জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে তাকে সাইটেট করা একাডেমিকভাবে সিদ্ধ। কিন্তু হুবুহু বাক্য কপি করাকে বলা হয় প্লেজিয়ারিজম। এটি গুরুতর অপরাধ।
আমি কেবল, এই মহান শিক্ষিকার একটি আর্টিকেল দেখেছি, নৃবিজ্ঞানের এই শিক্ষকের অন্যন্য প্রবন্ধগুলো তিনি কি করেছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা যেভাবে পাতার পর পাতা চুরি করে আর্টিকেল লিখেছে, তা সুস্পষ্ট একাডেমিক অফেন্স, যার শাস্তি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদ খুয়ে নন, ফৌজদারি অপরাধের দায়ে দুষ্ট। পদোন্নতির জন্য চৌর্যবৃত্তি করে, লিজারা শিক্ষকতার মহান পেশায় কখনোই থাকতে পারে না।
আমি দেখতে চাই, এমন চুরির পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের এই সুযোগ্য প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেন। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত, এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া। সেটি করতে না পারলে তা হবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কলঙ্কজনক।
এমআই