সৈয়দ জামান লিংকন, রিসার্চ ডিরেক্টর, মিতসুবিশি কেমিক্যাল অ্যাকুয়া সল্যুশন্স:
স্বাধীনতার পর আমার জন্ম। মোটামুটি ৮৫ সালের পর থেকে স্মৃতিগুলো মনে আছে।
সে সময় আমাদের গ্রামে বেশীরভাগ পরিবার ছিল দরিদ্রসীমার নীচে। তিনবেলা পেট ভরে খেতে পারত এরকম পরিবারের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। আমাদের পরিবারটি ছিল যৌথ বড় পরিবার (১৬ জনের পরিবারে ১০ জন পড়াশুনা করতাম), তিনবেলা কোন রকমে খেতে পারতাম।
আমার পরিষ্কার মনে আছে, ক্লাশ ফাইভে পড়ার সময় আমাকে নতুন লাল একটা জামা কিনে দিয়েছিল, তার আগ পর্যন্ত সম্ভবত পুরাতন গাউন কিনে আমাদের জামা বানানো হত। ভালো খাবার, পোলাউ/মাংস জুঠত দুই ঈদে কিংবা কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে।
শীত আসলে দেখতাম কিছু মানুষ পাটের ছালার ব্যাগ শরীরে দিত, শুকনো খর কিংবা ধানের ন্যাড়া পুড়িয়ে শীত নিবারন করত। ভিক্ষা করে কিংবা সাহায্য নিয়ে চলত অনেক পরিবার। ১ মুটো চালের জন্য কান্না করতে দেখেছি কতশত মা কে। তিনবেলা পেট ভরে খেতে দিলে সারাদিন কাজ করে দিত, সে সময়ের হত দরিদ্র মানুষগুলো। সন্তানকে খেতে দিত পারত না বলে ৪-৫ বছরের সন্তান কে অন্যের বাড়িতে দিয়ে দিত কাজ করে খাওয়ার জন্য। এ রকম ২-১ জন তখন আমাদের বাড়িতেও কাজ করত।
আর এখন আমাদের গ্রামের বাড়ীতে গেলে, আগের স্মৃতিগুলোকে স্বপ্নের মত মনে হয়। এই গ্রামটি আসলেই এত দরিদ্র ছিল? যারা একসময় পেটের দায়ে কাজ করত, তারা আজ অনেক স্বচ্ছল, বাড়িতে পাকা দালান, সন্তান নাতি নাতনি নিয়ে ভালোই কাটছে তাদের দিনকাল। পেটের দায়ে সন্তানকে অন্যের বাড়িতে দিতে হয় এরকম পরিবারের সংখ্যা এখন নাই বললেই চলে।
এই চরম দরিদ্র কে জয় করাকেই আমার কাছে ৫০ বছরে বিরাট প্রাপ্তি মনে হয়। ৩০ বছর আগে আমাদের জেনারেশন আজকের বাংলাদেশের কথা কল্পনা করত কি না সন্দেহ।
আমি থাকি পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত আর সভ্য একটি দেশে। তাই স্বভাবতই আমি বাংলাদেশকে তুলনা করে ফেলি এই দেশটির সাথে, যার ফলে আমার চোখে বাংলাদেশ কে মনে হয় দরিদ্র কিম্বা অসভ্য। যদি আমি ৩০ বছর আগের বাংলাদেশের সাথে তুলনা করি তখন কিন্ত মনে হয় বাংলাদেশ অনেক উন্নত। আমাদের বাড়িতে যে লোকটি ৩০-৪০ বছর আগে পেটে ভাতে কাজ করত, তার কাছে বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নত।
আগাচ্ছে বাংলাদেশ, সামনের দিনগুলোতে আরও আগাবে। চরম দারিদ্রতা মুক্ত বাংলাদেশ, স্বাধীনতার ৫০ বছর এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
লিংকন, টোকিও
মার্চ ২৭, ২০২১