শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

কোটিপতি থেকে নিঃস্ব গফুর উল্লাহ

শনিবার, মার্চ ২৭, ২০২১
কোটিপতি থেকে নিঃস্ব গফুর উল্লাহ

গোলাম আজম খান,কক্সবাজার : আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন গফুর উল্লাহ মেম্বার। এখন নির্বাক তিনি। পুড়েছে তার একারই ৩০০ দোকান। দোকানসহ সহায়-সম্পদ হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি। কোনো কিছুই অবশিষ্ঠ নেই পরনের কাপড় ছাড়া!

গত সোমবার উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন কাল হয়েছে তার। ছিলেন এলাকার সাবেক মেম্বার। তার দোকান ছাড়াও আত্মীয়-স্বজনের এক হাজার দোকান পুড়েছে ওই ঘটনায়। সব মিলে শত কোটি টাকার সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব তিনি এবং তার স্বজনরা। 

২০১৭ সালের দিকে সহায় সম্পদ বিক্রি করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাই স্থাপন করেন ৩০০ দোকান। খরচ হয়ে যায় সম্পদ বিক্রির পাঁচ কোটি টাকা। সেই দোকানগুলোই পুড়ে ছাই হয়েছে। সোমবার আগুন লাগার পর থেকে এখন ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে নির্বাক সময় কাটছে তার। সাথে সঙ্গী হয়েছে এক রাশ দুশ্চিন্তা। এ ছাড়াও ওই ঘটনায় পুড়েছে গ্রামের ২০০ বসতবাড়ি। পথে বসেছে ২০০টি পরিবার। অনেকেই হারিয়েছেন ব্যবসার পুঁজি।

সহায় সম্পদ হারানো ফার্মেসি দোকানদার আবদুর রহমান জানান, জায়গাজমি বিক্রি করে ৯০ লাখ টাকার ওষুধ মজুত করে ছিলেন দোকানে। মুহূর্তের মধ্যেই শেষ সেই পুঁজি।

তাঁর মত অনেকেই আকস্মিক আগুনে পুড়ে যাওয়া সহায় সম্পদ ও মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকু হারিয়ে বোবা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন স্ত্রী সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তাদের ভবিষ্যত কী হবে। তাদের নিয়ে কোথায় উঠবেন। আগুনে যে ঘর, দোকান ও সহায় সম্পদ পুড়ে গেছে তার পুনর্বাসন হবে কি? এই প্রশ্ন শুধু বালুখালীতে আগুনে পুড়ে যাওয়া সর্বস্ব হারানো গফুর উল্লাহ মেম্বারের নয়। পুরো স্থানীয়দের। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, এমপি, চেয়ারম্যান আসছেন যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও পুনর্বসানের আশ্বাসও দিচ্ছেন। তাতেও পাচ্ছেন না ভরসা। কারণ এদেশে কোনো জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের পর পুনর্বাসনের দৃষ্টান্ত খুব একটা সুখকর নয়। তাইতো কারো আশ্বাসে মন ভরছে না স্থানীয়দের।

গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এতে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা। প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডে ১৫ জন আগুনে পুড়ে মারা গেছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ শ’ আহত এবং ৪০০ জনের মতো এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।

অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাগোয়া স্থানীয়দের দুই শতাধিক বাড়িঘর, এক হাজার দোকান ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায় অসংখ্য নিম্ন আয়ের স্থানীয় মানুষদের ঠিকানা। যেখানে দিন শেষে পরিশ্রান্ত দেহের ঠাঁই হয় তাদের। কিন্তু গত চার দিন ধরেই তারা নেই আপন ঠিকানায়। কেউ আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে আছেন, কেউ আত্মীয়ের বাসায়। আর যারা কোথাও স্থান পাননি তাদের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশে নিচে সড়কে। খোলা আকাশের নিচেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পার্শ্ববর্তী রোহিঙ্গারা বিভিন্ন এনজিও ও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের তত্ত্বাবধানে খাবার পেলেও পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। এমনকি গত চার দিনে গোসল ছাড়াও রয়েছেন কেউ কেউ।

উখিয়া উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সকল পরিবারকে সরকারি সাহায্যের আওতায় আনা হবে। একটি পরিবারও খোলা আকাশের নিচে থাকবে না। একজন ব্যক্তিও না খেয়ে থাকবে না। কোনো পরিবার সরকারি সাহায্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ে থাকলে, তাদেরকেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কারণ ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের একটা অংশ।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা জনিয়েছেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের তালিকা প্রনয়ণ করা হচ্ছে। তাদেরও পুর্নবাসনের কাজ চলছে।

এ দিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ১২৬ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে দেশের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কোস্ট ফাউন্ডেশন। সংস্থারটির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে উখিয়ার বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অর্থ সহায়তা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিমুল এহসান খান।

এ ছাড়াও নগদ অর্থ সহায়তা অনুষ্ঠানে কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, কর্মকর্তা মো: শাহিনুর ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ গত ২২ মার্চ বালুখালী ক্যাম্পে অগ্নি দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১২৬টি স্থানীয় পরিবারের মাঝে নগদ এক হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তাছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের রাতে তাৎক্ষণিকভাবে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় সহায়তাও দিয়েছে কোস্ট ফাউন্ডেশন।

সময় জার্নাল/এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল