বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০২১ সালে ৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বাতাস দেখা গেছে গাজীপুর জেলায়। গত বছর এ জেলার বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ক্ষতিকর বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর মাত্রা ছিল গড়ে ২৬৩.৫১ মাইক্রো গ্রাম।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা জেলা (সিটি করপোরেশনের আওতা বহির্ভূত এলাকা)। একই সময়ে ঢাকা জেলার বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ক্ষতিকর বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর মাত্রা ছিল ২৫২.৯৩ মাইক্রো গ্রাম এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ; যেখানে পিএম-২.৫ মাত্রা ছিল ২২২.৪৫ মাইক্রোগ্রাম।
আজ (বৃহস্পতিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দিয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্র (ক্যাপস)। দেশের ৬৪ জেলার বাতাসের মান নিয়ে চালানো গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয় এ অনুষ্ঠান থেকে। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার অনুষ্ঠানে তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ক্যাপস ৬৪ জেলার বায়ুমান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সর্বমোট ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০২.৪১ মাইক্রোগ্রাম; যা দৈনিক আদর্শ মানের (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে প্রায় ১.৫৭ গুণ বেশি।
আর গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বায়ুমান ছিল বাংলাদেশের আদর্শমানের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি। এসব জেলায় বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, সবচেয়ে কম দূষিত শহরের মধ্যে রয়েছে মাদারীপুর। এ জেলার বাতাসে পিএম-২.৫-এর মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৪৯.০৮ মাইক্রোগ্রাম। মাদারীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে পটুয়াখালী এবং মেহেরপুর।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসব জেলায় বায়ু দূষণ কম হওয়ার কারণ প্রচুর গাছপালা এবং প্রাকৃতিক জলাধার। এসব এলাকায় সংস্কার কাজের পরিমাণও কম।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ৬৪টি জেলার মধ্যে শুধুমাত্র ১০টি জায়গায় বায়ুর মান ভালো পাওয়া যায় (প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম নিচে)। সে জায়গাগুলো হলো- কুড়িগ্রাম (৬৩.৩৩ মাইক্রোগ্রাম), নাটোর (৬৩.১৯ মাইক্রোগ্রাম), জয়পুরহাট (৫৮.২৪ মাইক্রোগ্রাম), রাজবাড়ী (৫৮.২২ মাইক্রোগ্রাম), রাজশাহী (৫৬.৪১ মাইক্রোগ্রাম), পাবনা (৫৬.২২ মাইক্রোগ্রাম), সিরাজগঞ্জ (৫৫.২ মাইক্রোগ্রাম), মেহেরপুর (৫৩.৩৭ মাইক্রোগ্রাম), পটুয়াখালী (৫১.৪২ মাইক্রোগ্রাম) এবং মাদারীপুর (৪৯.৩৮ মাইক্রোগ্রাম)।
বায়ুদূষণ রোধে ৩টি মেয়াদে ১৫ দফা সুপারিশ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। সুপারিশগুলো হচ্ছে-
ক. স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ: শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতি দিন ২-৩ ঘণ্টা পর পর পানি ছেটানোর ব্যবস্থা করা; নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখা ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নেওয়া; রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা; অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়ানো এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা।
খ. মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ: সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগানো ও ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করা, আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করা; দূষিত শহরগুলোর আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করা; আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে স্যান্ড ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ানো এবং সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করা।
গ. দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ: নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ বাস্তবায়ন করা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো ও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করা, গণপরিবহণসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করা এবং পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস ও পরিবেশ আদালত চালু এবং কার্যকর করা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকি, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল প্রমুখ।
এমআই