এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ভারী বোঝাইকৃত মাটি-বালুভর্তি ট্রাকের কারণে ১৫ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অবৈধ এই বালুর ট্রাকের দাপটে নতুন সংস্কার করা রাস্তার ক্ষতিসহ এলাকাবাসীও অতিষ্ট। দ্রুত এই দশ চাকার ভারী লোডের ট্রাক বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাত্র পনের দিন আগে কাজ করা হয়েছে। এখনও কাজ চলমান। রাস্তার কাজ শেষ করার কয়েকঘন্টা পরেই বালু ভর্তি দশ চাকার ভারী লোডের ট্রাক চলাচল করছে।
ফলে এক সপ্তাহে তিনবার সংস্কার করতে হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। তারপরও সড়কটির অবস্থা বেহাল। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা সদর হতে মধুখালীর নওয়াপাড়া পর্যন্ত সদ্য সংস্কার করা সড়কটির পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়েছে।
উপজেলা সদরের কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ হতে ময়না-হাটখোলারচর হয়ে মধুখালীর নওয়াপাড়া পর্যন্ত সড়কটির সংস্কার কাজ চলছে। ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী ও রাখালগাছী গ্রামের মধ্যে অন্তত এক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে এই ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে এক কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্নস্থানে রাস্তা ফেটে গেছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি অবৈধভাবে চলাচল করা বালুর ট্রাক বন্ধের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসী।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বোয়ালমারী সদর থেকে মধুখালীর নওয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা বেহাল অবস্থায় ছিল দীর্ঘদিন। গত পনেরদিন আগে সড়কটির সংস্কার করা হয়। ভাঙাচোরা সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় বেশ খুশি হয়েছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু মাত্র পনের দিন যেতে না যেতেই রাস্তার পিচের ঢালাই সরতে শুরু করেছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
তাদের অভিযোগ, বিশেষ করে রাতে অবৈধভাবে ভারী যানের ট্রাক চলাচল করে। রাস্তার যে ধারণক্ষমতার থেকে বেশ কয়েকগুণ ওজনের ট্রাক যাতায়াতের কারণেই এই নতুন রাস্তার সমস্যা।
উপজেলার ঘোষপুর গ্রামের মিতুল মিয়া জানান, আমাদের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কাজ শুরুর পরে মনে করলাম এখন খুব ভালোভাবে চলতে পারবো। কিন্তু কাজ করার কয়েকদিন পরেই এই খারাপ অবস্থা।
এ বিষয়ে সড়কটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. জাহিদুল হোসেন জাহিদ বলেন, রাস্তাটি নিয়ম অনুযায়ী ও সঠিকভাবে কাজ করার পরেও বালুভর্তি ভারী লোডের ট্রাকের কারণে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। রাস্তার ধারণক্ষমতা ৮/১০ টন সেখানে দশ চাকার ৩০/৪০ টনের বালুবোঝাই ট্রাকের কারণে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দুই তিন বার ঠিক করার পরেও পুনরায় কাজ করতে হচ্ছে।
চন্ডিবিলা এলাকার বাবু মোল্লা দশ চাকার ট্রাকে বালুভর্তি করে রাত-দিন যাতায়াতের কারণে এই ক্ষতির শিকার হচ্ছি। আমি নিজে তার হাতে পায়ে ধরে অনন্ত ১৫/২০ দিন বন্ধ রাখতে বলেছি কিন্তু তিনি তা কর্ণপাত করছেন না।
এ বিষয়ে বালু ব্যাবসায়ী বাবু মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ঘোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন নাবাব মিয়া বলেন, রাস্তার কাজ ভালই হয়েছে। কিন্তু বালু ব্যাবসায়ী বাবু মোল্লার ভারী লোড করা ট্রাকের জন্য এই সমস্যা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী জানান, দশ টনের জায়গায় প্রায় ৩০/৪০ টন ওজনের বালুর ট্রাকের কারণে নতুন সংস্কার করা রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। ভারী ট্রাক বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) মো. ফারুক হোসেন বলেন, মোট প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে যে এক কিলোমিটারে ভারী ট্রাক চলে সেখানে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাক বন্ধ করা না হলে রাস্তা টিকবে না।
এমআই