চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মোটা অঙ্কের লোভ দেখিয়ে মানুষের কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া নামের এক ব্যক্তি। পাওনা টাকা পরিশোধ না করে উল্টো মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জসিম উদ্দিন ভুঁইয়াকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে তাকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ।
শুক্রবার উপজেলার কনকাপৈত ইউপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নানা অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ভুলকরা গ্রামের মোস্তফা কামাল লিটন, ফাতেমা বেগম, পাঠানপাড়ার ইউনুছ মোল্লা ফরহাদ, পাতড্ডার মাসুদা বেগম, হান্ডা গ্রামের মীর হোসেন ও কবরুয়ার মোঃ এছাক।
এ সময় চিওড়া, কনকাপৈত ও বাতিসা ইউনিয়নের নির্বাচিত কয়েকজন মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে প্রতারক জসিম উদ্দিন ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোরদাবি জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী উত্তর সোনাইছা গ্রামের জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া ২০০৪-৫ সালে চিওড়া ইউনিয়নের কবরুয়া জামে মসজিদে ইমামতি করতো। ওই সময় কনকাপৈত ইউনিয়নের কনকাপৈত গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার হাজী নজির মিয়ার মেয়ে ছখিনা আক্তারকে বিয়ে করে। এরপর থেকে আসা-যাওয়াতে এলাকার অনেক মানুষের সাথে সে সম্পর্ক গড়ে তোলে।
২০০৬ সালে সে সৌদি আরব চলে যায়। ওইখানে থেকে সে চিওড়া ও কনকাপৈত ইউনিয়নের পরিচিত অসংখ্য লোককে সৌদিআরবে নেয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করে। ২০১৬ সালে জসিম উদ্দিন সৌদিআরবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা খেয়ে দেশে ফেরত আসে। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত আত্মগোপনে থাকে। ২০২০ সালের শেষে দিকে জসিম উদ্দিন ‘সুম্মাজ কো-অপারেটিভ’ নামে নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। ওই প্রতিষ্ঠানে বেশি লাভে বিনিয়োগ ও কম সুদে ঋণ দেওয়ার নাম করে জসিম উদ্দিন দুই ইউনিয়নের শত শত মানুষ থেকে জমির দলিল, স্ট্যাম্প এবং চেক নেয়। ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের মাঝামাঝি সময়ে সে বিশৃঙ্খলা করে উল্টো গ্রাহকের বিরুদ্ধে অবস্থাভেদে ১০-৫০ লক্ষ টাকা পাওনা দাবি করে আদালতে চেকের মামলা করে। এছাড়া অনেকের থেকে বেশি লাভে বিনিয়োগের কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে। বিনিয়োগকারী ও ঋণ গ্রহীতা উভয়কেই জসিম উদ্দিন সুযোগ বুঝে আদালতে চেকের মামলা দিয়ে হয়রানী অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে ২০২১ সালে কনকাপৈত বাজারের মাহিয়া ইলেকট্রিক এন্ড ফার্ণিচার হাউজের মালিক মোস্তফা কামাল লিটনের সাথে সে সম্পর্ক গড়ে তোলে। একদিন সুযোগ বুঝে লিটনের দোকান থেকে অন্যজনের জন্য স্বাক্ষর করে রাখা দুইটি চেক এবং স্ট্যাম্প নিয়ে যায় জসিম উদ্দিন। পরে ব্যবসায়ী লিটন বিষয়টি বুঝতে পেরে জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গেলে উল্টো তার নামে দুইটি চেকের মামলা করেছে। এছাড়াও জমি খারিজ, এসএস ফাউন্ডেশন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে শেয়ার ও একটি কোম্পানীতে ইন্স্যুরেন্স করানোর নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এদিকে পাঠানপাড়া গ্রামের ইউনুছ মোল্লা ফরহাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মিথ্যা মামলার মধ্যে একটি থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। অন্য দুইটির নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। এসব ঘটনায় আলকরা, চিওড়া ও কনকাপৈত ইউপি কার্যালয়ে শালিশ বৈঠক ডাকলেও জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া কখনও হাজির হতো না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বয়স্ক এক নারী বলেন, জসিম উদ্দিন ভুঁইয়ার দায়েরকৃত মামলার কারণে থানা থেকে পুলিশ এসে আমার বৃদ্ধ স্বামীকে খোঁজ করে। কোন পথ দেখছি না, কি করব। আদালত থেকে আমরা জামিন নিয়েছি। কিন্তু মামলাটি যে মিথ্যা সেটি প্রমাণ হতে তো অনেক সময়ের ব্যাপার। এ সময়ে অনেক হয়রানীর শিকার হচ্ছি। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে বিচার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট দাবি জানাচ্ছি-তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে মানুষ হয়রানী থেকে বাঁচবে।
পাঠানপাড়া গ্রামের ইউনুছ মোল্লা ফরহাদ বলেন, জসিম উদ্দিন টার্গেট করে মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। এক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রলোভনে তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়। উল্টো সে মানুষের নিকট টাকা পাবে বলে দাবি করে আদালতে মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানী অব্যাহত রেখেছে। আমি তার বাড়িঘর চিনি না। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে তার বাড়িতে হামলার অভিযোগেও আদালতে মামলা দিয়েছে। এছাড়া মামলা দেওয়ার পর আদালতে সে নিজে এবং স্বাক্ষীদের হাজির করে না। গত কয়েক বছর ধরে জসিম উদ্দিনের মিথ্যা মামলার কারণে আমি এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আমি তার গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
কনকাপৈত বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল লিটন বলেন, আমি তার কাছে ইলেকট্রিক এবং ফার্ণিচারের টাকা পাই। কিন্তু আমার দোকান থেকে কৌশলে নেয়া দুটি চেকের মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানী করছে। আমি এর সঠিক বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে শুক্রবার বিকেলে জসিম উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কোন নারী-পুরুষের টাকা আত্মসাত করিনি। আমার থেকে নেয়া হাওলাতি টাকা বার বার চেষ্টা করেও ফেরত না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি’।
সময় জার্নাল/আরইউ