এহসান রানা। ফরিদপুর প্রতিনিধি: বিদেশে ভালো বেতনে কাজের আশায় যেকোন উপায়েই হোক স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে চেয়েছিলো ফরিদপুরের ৩ তরুণ।
পাশের গ্রামের দুই প্রবাসী যুবকের সাথে এজন্য ৩০ লাখ টাকায় চুক্তিও হয়। এরমধ্যে অভিভাবকেরা ২৪ লাখ টাকা দিয়েছে দালালদের। বাকি টাকা দেয়ারও প্রস্তুতি চলছিলো কিন্তু এরইমধ্যে লিবিয়ায় একটি ঘরে বন্দি হওয়ার পর নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে গত এক সপ্তাহ যাবত তাদের কোন খোঁজ নেই। এনিয়ে পরিবারের লোকেরা অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
নিখোঁজ এই তিন তরুণ হলো, ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বাবুর কাইচাইল গ্রামের ফারুক মাতুব্বরের ছেলে মঈন মাতুব্বর ওরফে ফয়সাল (১৮), ইউনুস শেখের ছেলে সামিউল শেখ (১৯) ও মাজেদ মিয়ার ছেলে নাজমুল মিয়া (২২)।
ফয়সালের বাবা ফারুক মাতুব্বর বলেন, তার ছেলেসহ তিনজনকে ৩০ লাখ টাকায় ইতালি নিয়ে যাবে বলে কথা হয়েছিলো পাশের ছোট নাউডুবি গ্রামের দুই প্রবাসী শওকত চৌধুরী ও রাসেল মিয়া (২৪)। তিনি বলেন, এজন্য ২৪ লাখ টাকা নগদ দিয়েছি শওকতের ভাই ইলিয়াস চৌধুরী ও রাসেলের ভাই শাহিনকে।
ব্যাংকের মাধ্যমে কেনো টাকা দেননি এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরিবিলি তাদের বিদেশ পাঠানো হবে তাই ব্যাংকের বদলে নগদ টাকা দিতে বলে। তিনি নিজেই ইলিয়াসের হাতে টাকা তুলে দেন।
ছোট নাউডুবি গ্রামের শওকত ও রাসেল আপন চাচাতো ভাই। ফারুক মাতুব্বরের মামাতো ভাইয়ের ছেলে তারা। লিবিয়ায় গেছেন ৪ বছর আগে। এ তথ্য জানিয়ে ফারুক মাতুব্বর বলেন, এর আগেও তারা তিনজনকে এভাবে ইতালি নিয়ে যায়। পরিচিত ও আত্মীয় বিধায় তাদের প্রতি বিশ্বাস জন্মে। গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বিমানযোগে ফয়সাল, নাজমুল ও সামিউলকে নিয়ে যায় লিবিয়ার একটি শহরে। তারপর তাদের দ্রুতই ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানায় দালালেরা। এজন্য বাকি ৬ লাখ টাকা রেডি রাখতে বলে। সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি রাত ১০ টার দিকে ফয়সালের সাথে তার কথা হয়। এসময় ফয়সাল ও তার বন্ধুরা ভয় পাচ্ছিলো।
''আমাদের সাগরের পাড়ে নিয়ে আসছে। মনে হয় নৌকায় উঠাবে। তোমরা দোয়া কইরো আমাদের জন্য।'' ছেলের কন্ঠে সর্বশেষ এ কথাই শুনতে পেয়েছেন ফারুক।
ফয়সালের সাথে এভাবে ইতালি যেতে লিবিয়ায় আটকদের একজন নাজমুল৷ তার ভাই সম্রাট বলেন, শওকত ও রাসেল তার ভাইদের বডি কন্টাক্টে ইতালি নিয়ে যাবে বলেছিল। বডি কন্টাক্ট মানে কি? এর জবাবে সম্রাট বলেন, লিবিয়া যাওয়ার পথে যতবার ধরা খাবে ততবার ওরা ফেরত আনবে। ওদের বডি যেকোন উপায়ে ইতালি পৌছে দেবে। ওদের হান্ড্রেড পারসেন্ট ইতালি নিয়ে যাওয়ার দ্বায়িত্ব তাদের। যতো টাকাই লাগুক এতে।
সম্রাট জানায়, তিনমাস আগে লিবিয়ার শহরে গেছে। তারপর গেম ঘরে রাখছে। আমাদের একটা আত্মবিশ্বাস ছিলো যেহেতু ওরা (দালালেরা) ওই দেশে আছে তাই ওরা হয়তো ওদের ইতালি নিতে পারবে। সর্বশেষ তার ভাই তাদের বলেছিলো, গেম ঘর থেকে সাগর পাড়ে নিয়ে যাইতেছে। ১ থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে বোটে উঠাবে। আমরা ওদের ভরসা দেই। আল্লাহর নামে বোটে উঠতে বলি। কোন সমস্যা হবেনা তাও বলি।
সম্রাট জানান, ২৭ জানুয়ারির পর প্রথমদিকে দালালরা এমনও বলেছিলো যে, তার ভাইয়েরা ইতালি পৌছে গেছে। বাকি টাকা রেডি রাখতে বলছিলো। শেষে বলেছে, ওরা মাল্টা থেকে ধরা খাইছে। থামছা থামছা জেলে আছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওরা নিশ্চিত করে যে, ওরা তিনজন থামছা থামছা জেলে আছে। এরপর ওরা সামিউলের একটা ভয়েস রেকর্ড পাঠায়। যেখানে সামিউল বলছে, "আমরা কষ্টে আছি, আমাদের বাঁচাও"।
সম্রাট বলেন, শুক্রবার ওই তিন যুবকের সাথে দেশে পরিবারের লোকদের কথা বলিয়ে দেবে বলেছিল। এদিন তারা পাশের ছোট নাউডুবি গ্রামে দালাল শওকত ও রাসেলের বাড়িতে যান। সেখানে যেয়ে দেখেন ওদের বাড়িতে কেউ নেই। এমনকি গরু ছাগল হাস মুরগি কিছুই নাই।
ফারুক মাতুব্বর এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি থানার ওসিকে জানিয়েছেন। প্রয়োজন হলেআইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এ বিষয় নগরকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিল হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সময় জার্নাল/আরইউ