এহসান রানা, ফরিদপুর: ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরে গার্লস স্কুলের সামনের সড়কের পাশে দীর্ঘ ৫০ বছরযাবত নরসুন্দরের কাজ করছেন জীবন কুমার শীল। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৮৯ বছর। তার ছয় ছেলে এবং নাতিপুতি মিলে ৩৫ সদস্যের পরিবার। একই দোকানে তার ছয় ছেলে ও নাতিরাও করছেন এই নরসুন্দরের কাজই। এই দোকানটিই তাদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন। জীবন কুমারের পৈত্রিক ভিটা ছিলো পাশের গ্রাম জগদিয়া বাইলা গ্রামে। পিতার ৩ শতক জমির সাথে আরো ১০ দশক জমি কিনে কোনরকম একটি ভিটে তৈরি করেছেন। সেখানেই বসবাস করছেন ছয় ছেলে ও ৩৫ জন নাতিপুতি নিয়ে।
এদিকে হঠাৎই যেনো জীবন কুমার শীল ও তার পরিবারের জীবনে নেমে এসেছে কালো মেঘ। গার্লস স্কুল সংলগ্ন তার দোকানের পিছনে পুকুর ভরাট করে সম্প্রতি অনেকগুলো দোকান ঘর তৈরি করা হয়েছে। এল প্যাটার্নের ওই বিপনী বিতানে প্রবেশের মূল পথটি গার্লস স্কুলের সড়কের লাগোয়া। তবে মার্কেটের একেবারে উত্তর-পশ্চিমে একটি বাইপাশ পথ তৈরির পরিকল্পনা আছে। সেজন্য সেখানকার কতিপয় যুবক জীবন কুমার শীলকে দোকান ছেড়ে দিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। একেবারেই নিরীহ গোছের এই সংখ্যালঘু পরিবারটি এতে নিদারুণ ভীতসন্তস্ত হয়ে পড়েছে। উপার্জনের সম্বল হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম হয়ে যায় পরিবারটির সদস্যদের মাঝে।
বিষয়টি জানতে সরেজমিনে গেলে সাথে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন জীবন কুমার শীল, তার পুত্র ও নাতিরা।
তারা জানান, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ২০ বর্গমিটারের এই জমি ফি বছর একসনা বন্দোবস্তের ভিত্তিতে গত প্রায় ৫০ বছর যাবত তারা এখানে নরসুন্দরের দোকান করছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। এখন তাদেরকে এই দোকান ছেড়ে দিতে হবে বলে বলছে সেখানকার কতিপয় ব্যক্তি। তারা বলেন, এই দোকানটি হারালে তাদের আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে পথে বসতে হবে। তারা এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এ বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যেতি প্রু জানান, এই পরবিারটিকে কোনভাবেই উচ্ছেদ করার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে সেখানে নতুন মার্কেট তৈরির পর জীবন কুমারের দোকানটি দিয়ে একটি বাইপাস পথ তৈরির প্লান রয়েছে। ওই পরিবারটিকে এজন্য দোকান ছাড়তে হবে জেনে আমি নিজে সেখানে যেয়ে তাদের সাথে এব্যাপারে কথা বলেছি।
তিনি আরো জানান, প্রথমে আমি তাদেরকে নতুন মার্কেটের একটি পজিশন দিতে চেয়েছি। জীবন কুমারের দোকানের পেছনেই ওই পজিশনটি নিতে তারা প্রথমে রাজিও হয়েছিলো। ওই পজিশনটি নিতে একজন জনপ্রতিনিধি আগ্রহী ছিলো। আমি ওই জনপ্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে সেটি জীবন কুমার শীলদের দিতে চেয়েছি। তবে প্রথমে তারা রাজি হলেও এখন রাজি হচ্ছে না। সমস্যাটি এখানেই হয়েছে। এসময় জীবন কুমার শীলের দোকানটির পুরো অংশ জুড়ে বাইপাস পথ তৈরি হলে এই পরিবারটিকে পথে বসতে হবে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
সাংবাদিকেরা এককভাবে জীবন কুমারের দোকান জুড়ে বাইপাস পথ তৈরি না করে আশেপাশের অন্যদের থেকে অল্প অল্প জায়গা নিয়ে একটি চলাচলের সরু গলি তৈরি করার অনুরোধ জানান। এতে কম করে হলেও জীবন কুমারের দোকানটি উচ্ছেদ করতে হবে না। বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্বাস দেন।
নগরকান্দা বাজারের পার্শ্ববর্তী ভূসিমাল বিক্রেতা বলরাম সাহা বলাই জানান, স্বাধীনতার পর থেকে জীবন কুমার শীল এখানে দোকান করছেন। তিনি খুবই নিরীহ প্রৃকতির মানুষ। তার ছেলেরাও বাবার মতো একই পথে জীবিকা উপার্জন করছে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের গৃুহহীনদের জমিসহ ঘর দিচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আমরা তাকে যে সময়টুকু পেয়েছি তাতে মনে হয়না তিনি এই অসহায় পরিবারের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন। আমরা আশা করবো তিনি বিষয়টি মানবিক দিকে থেকে বিবেচনা করবেন।
এমআই