পৃথিবী থমকে গেলে
মনে কর একদিন পৃথিবীটা নিকষ অন্ধকারে ভরে গেছে,
সূর্য ওঠেনি তার সময়কে সাড়া দিয়ে।
সমস্ত ইঞ্জিন হয়ে গেলো নিশ্চুপ,
কারখানা বন্ধ, রাস্তার গাড়িগুলো শো শো করে ছুটছে না,
আকাশে শব্দ নেই উড়োজাহাজের ডানা খুলছে না আর।
বিদ্যুৎ বাতিগুলো জ্বলতে ভুলেই গেছে, পাখাগুলো নড়ছে না,
সিনেমা হলে নেই পরিদর্শক,
টিভির পর্দাখানা কালো রঙে থির হয়ে, পত্রিকা অফিসের কাজ বন্ধ।
মনে কর ফোনগুলো চার্জ নিতে ভুলে গেছে, গণমাধ্যম সব ডুমুরেরফুল।
রাস্তায় বের হলে পাদু’টো ভরসা শুধু, সাইকেল, রিকশার টুংটাং নেই।
ধাতব যন্ত্রগুলো ছাইভস্মের মতো নিষ্ফল পড়ে আছে ঘরদোরে, যেখানে যা কাজে লাগতো।
মনে কর ক্রমে ক্রমে আকাশ ফর্সা হলো,
সূর্য উঠলো হেসে ঝিলমিলিয়ে।
পাখিরা কি গান গায় বিচিত্র কোলাহলে নৈশব্দের সেই জগতটা জুড়ে,
বাতাসের ঝিরিঝিরি মায়াবী গজল হবে,
যা তুমি পাওনি কভু মনখানা পেতে।
এইবার দরজাটা খুলে ফেলো চুপিসারে,
চেয়ে দেখ বিস্তৃত উদার আকাশ।
ঘাসের ডগার পরে শিশিরের ঝিলমিল, খালি পায়ে পা রাখো দূর্বার পরে,
হেঁটে যাও বহুদূর, যতদূর চোখ যায়
সবুজের আলোয়ান বিছানো মায়ায়,
দুহাত ছড়িয়ে দাও অসীম শূন্য মাঝে,
বুক ভরে টেনে নাও শুদ্ধ বাতাস।
কবিতার বইখানা সাথে নাও আলগোছে,
দিনটা কাটিয়ে দাও চিত্রার পাড়ে।
দেখবে নদীর বুকে ঢেউয়ে ঢেউয়ে কতো কথা,
আহ্লাদে ঢলে পড়ে শিউলীর ডাল,
দেখবে সে বুনোহাঁস কচুরিপানার ফাঁকে,
টুপটুপ ডুব দেয় দারুণ আমোদে।
বহুদূর হেঁটে এসো সবুজ ধানের ক্ষেতে,
নালার পাশটি ঘেষে পা টিপে টিপে।
মাঠের শেষেই যে কিষাণের ঘর পাবে,
ক্লান্ত, শ্রান্ত দেহ বিছিয়ো দাওয়ায়।
একমুঠো ঝোলাগুড়, কাসার গেলাসে পানি,
জড়িয়ে আসবে চোখ আদুল দাওয়ায়।
সন্ধ্যার মুখোমুখি চাও যদি ফিরে এসো,
নিয়ে এসো হৃদয়ের ডাইরিটা ভরে,
চিত্রার কলতান, পাখির মিষ্টি গান, বাতাসের প্রাণখোলা মায়াবী গজল।
যান্ত্রিক পৃথিবীটা হঠাৎ থমকে গেলে পেয়ে যাবে সীমাহীন মুক্ত আকাশ,
নিসর্গ জুড়ে আছে জীবনের জয়গান মনের ডাইরি জুড়ে সব লিখে নিও,
তারপর ফের যদি রোজকার অভ্যাসে ডাইরিটা চিরকাল প্রাণ হয়ে রবে।
এমআই