মানিক মুনতাসির: মুখোশের আড়ালে! আমিও একজন আদর্শ সৈনিক। কিসের সৈনিক বঙ্গবন্ধু, জিয়া, মওদূদী, আল্লাহমা শফির সৈনিক। কেউ কেউ আবার ভাসানী, মোজাফফর, লেলিন, চে গুয়েভেরার আদর্শও লালন করি বাহ্যিকভাবে।
অথচ পশ্চাতে কেনদিনও স্মরণীয় এই ব্যক্তিদের জীবনী ঘেটে দেখিনি। যাকে আদর্শ মানি তার বাবার নামটি পর্যন্ত জানি কতজন? তা বুকে হাত দিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন। সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে অমুকের সৈনিক, তমুকের সৈনিক শ্লোগান ধরি৷ কিন্তু একবারও কি ভেবেছি আমি আসলে কার রক্ত থেকে সৃষ্ট। বাবা আমায় ইহজগত, পরজগতে মুক্তি দেবে এমন আশায় মাথা নুইয়ে সিজদা করতেও পরোয়া করি না। অথচ নিজের বাবাকে রেখেছি বৃদ্ধাশ্রমে।
অফিস ছেড়ে সিভিল প্রশাসনের লোক আজ লাঠি হাতে হরতাল প্রতিরোধ করে রাজপথে তাহলে আর রাজনীতিবিদদের কাজ কি? আপনিই যদি সরকারি চাকুরে হয়ে হরতাল দমনে নেমে পড়েন তাহলে বুঝতে আর বাকি নেই আপনি হয়তো তেলের দাম কমাচ্ছেন।
সংবাদকর্মী হয়েও ন্যায় অন্যায়কে পাত্তা না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন তখনই বেঝা যায় আপনার মুখোশটা আপনি নিজেই খুলে ফেলেছেন। হয়তো আবার ঠুকনো কিংবা বড় যে কোন অঘটনে আইন শৃংখলা বাহিনীরও আগে আপনি কোন এক গোষ্ঠীকে দায়ী করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারনা চালাচ্ছেন তখনই বোঝা যায় আপনি আসলে কোন একটা পদ পদবি কিংবা টেন্ডার খুঁজছেন। অথবা কারো নজরে আসার জন্য কারো নিতম্বে তৈল মর্দন করছেন।
নিজেকে হিরো সাজাতে বন্ধুদের কাছে মুখরোচক গল্প ছাড়ছেন কিন্তু আসলে আপনি জানেনই না যে ঠাকুরমার ঝুলির আবিস্কারকটা কে?
রাষ্ট্র, মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় বিষয়গুলোতে একমত হতে না পেরে ভিন্ন কোন মতামত দিচ্ছেন, চতুরতার সাথে নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি দাবি করছেন অথচ আপনার বাবা/ দাদা ছিলেন কোন এক শান্তি কমিটির প্রধান। সেটাকে ঢাকতে আজ আপনি নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম বা প্রজন্ম একাত্তরের বংশধর দাবি করছেন।
বিদেশে পালিয়ে কিংবা লেজ গুটিয়ে কোন এক অখ্যাত অনলাইন খুলে নিজেকে প্রচার করছেন আপনি একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক। অথচ ১০ বছরেও দেশের মাটির গন্ধ আপনার নাসিকায় পৌছে না। দেশের বাতাস গায়ে লাগলে আপনার দামী সুগন্ধীর ইজ্জত চলে যায়৷ ঠিক তখনি মুখে ফেনা তুলছেন আপনি একজন সজ্জন আর নিরহংকারী সাচ্চা মানবিক মানুষ।
আপনার ফেসবুক মেসেঞ্জারের চ্যাট বক্সের অত্যাচারে ষোড়শীরা লজ্জা পেলেও আপনি পুরুষত্ব দেখিয়ে বুক ফুলিয়ে হাঁটেন৷ কারণ আপনার পকেট আজ বহুত গরম। বছরান্তে নিজের মা বোনের খবর না নিলেও পাহাড়ে কোন তরুণীকে টিপ্পনী কাটা হয়েছে এমন খবরে পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছেন কারণ আপনি বুদ্ধিজীবী৷ আসলে আপনি একজন পরজীবী৷ এই বিবৃতির কল্যাণে আপনি কোন পদ পদবিই খুঁজছেন। নয়তো কোন প্রকল্পের সমন্বয়ক হওয়ার স্বাপ্ন আপনাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না।
রাস্তায় নেমে ভারত, চীন কিংবা আমেরিকা বিরোধী শ্লোগান দিচ্ছেন অথচ আপনার হাতের মাইক্রোফোন এমন কি সফেদ পাঞ্জাবিটাও হয়তো চীন কিংবা ভারতেরই তৈরি৷ ফলে আপনি আসলে নিজেকেই চেনেন না৷ যাই হোক নিজেকে চিনুন। আয়নায় চেহারা দেখুন। আপনি নিশ্চিত হবেন নিজের পূর্ব পুরুষ কোন বাদর না হলেও ইবলিশ নয়তো কোন আজব জন্তুই হবে। যা দেখতে হবে মনের চোখ দিয়ে। অনুভব করুন চোখ বুজে। নিশ্চিত হউন মুখোশের নিচেও হয়তো কোন মুখোশ।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।