এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরে ভালবাসা দিবসে জীবিকার্জনের জন্য দোকান ঘর উপহার পেয়ে ভালবাসার মানেটাই বদলে গেল পঙ্গু মিজান তালুকদারের জীবনে। তাইতো সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) ভালবাসা দিবসে দোকান উদ্বোধন করে পুনরায় সংসারের হাল ধরতে পেরে খুশিতে আত্নহারা হয়ে যান মিজান।
সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করা মিজানের পাশে এসে দাড়ায় ফরিদপুরের সেচ্ছাসেবী সংগঠন 'আমরা করবো জয়'। জীবিকা নির্বাহের জন্য গড়ে দেয় মিজানের বাড়ির সামনে একটি মুদি দোকান।
অনুসন্ধানে জানা যায় , ফরিদপুরের উত্তর আলীপুর রেললাইন এর পাশে রেজাউল করিম তালুকদারের বড় ছেলে মিজান তালুকদার (৩২)। মিজান দুই কন্যা সন্তানের পিতা। ৮ বছরের মিম আক্তার ও ৬ বছরের লামিয়া আক্তার। মিজান পেশায় ছিলেন অটোরিকশা চালক। ভাড়ায় অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ সংকুলান করতে না পেরে একদিন মিনি পিকআপের হেলপারি করতে রওনা হন। মাস চারেক আগে অক্টোবর মাসের ২ তারিখ ছিল তার হেলপারির প্রথম দিন। সন্ধ্যায় ফরিদপুরের কানাইপুর বাজার থেকে মিনি পিকআপে পান লোড করে রওনা দেন যশোরের উদ্দেশ্যে। রাত ২টার দিকে যশোরের চৌরাশ এলাকায় কাভার্ডভ্যানের সাথে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন পিকআপের চালক মোঃ সোহেল সহ মিজান। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নেন। অবশেষে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করার পরে ও বাম পা কেটে ফেলতে হয় তার। শুরু হয় তার পঙ্গু জীবন। সোহেলের কোমরের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার তিনি এখনও পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে নিয়ে অভাবের সংসারে শুরু হয় সংগ্রাম। করুণ সৃতি আর অভাবে রাতে দুচোখ এক হয় না মিজানের। প্রতিদিন ৮ শত টাকার ঔষধ খেতে হয় মিজানের।
এমন সময় 'আমরা করবো জয়' সংগঠনের সভাপতি আহমেদ সৌরভ মিজানের করুন কাহিনী শুনে ছুটে যান তার বাড়িতে। মিজানের কাছে শুনেন তার কি প্রয়োজন? মিজান জানান, আমাকে একটি দোকান ঘর করে দিলে আমি সংসার চালাতে পারতাম।
আহমেদ সৌরভ মিজানের দোকান ঘর নির্মাণের অর্থ সহায়তা শুরু করলে আমেরিকা প্রবাসী ব্যবসায়ী গোলাম সামধানী খান ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করেন। শুরু হয় দোকান নির্মাণ।
টিন, কাঠ, সিমেন্টের খুটি দিয়ে বাড়ির সামনেই রাস্তার পাশে দোকান নির্মাণ করা হয়। কিনে দেওয়া হয় দোকানের মালামাল। এর ফলে হয়তো মিজানের সন্তানের স্কুলে যাওয়া আর কেউ আটকাতে পারবে না।
সংগঠনের সভাপতি আহমেদ সৌরভ জানান, 'আমরা করবো জয়' সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সবসময় মানুষের পাশে গিয়ে দাড়াই। মিজান ভাই একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ। তিনি চেয়েছিলেন তার জন্য একটা দোকান করে দিতে। আমরা তার মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আনন্দিত।
মিজান তালুকদার জানান, আমার দুর্ঘটনার সময় চিকিৎসার জন্য প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। দুর্ঘটনা আমার জীবনকে অসহায় করে তুলেছিল। এমন সময় মানবিক ভায়েরা আমার পাশে এসে দাড়ায়। আমার থমকে যাওয়া জীবনকে আবার গতিশীল করে দেয়। আমি তাদের মঙ্গল কামনা করি।
সমাজসেবক কাজী গোলাম মহিউদ্দিন তসলিম বলেন, আমি তার জন্য বিনামূল্যে ঔষধের ব্যবস্থা করে দেব।
স্থানীয় ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামছুল আরেফিন সাগর বলেন, 'আমরা করবো জয়' একটি মানবিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন। আমি মিজানেরর জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি।
দোকানটি উদ্বোধনের সময় ইকরাম হাসান সৈকত,শরীফ খান, মুহুয়া ইসলাম, সাকিবুল ইসলাম, মামুন সেখ, রিয়াদ সেখ, মাহাবুব মোল্লা সহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এমআই