বটের ছায়া
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
কাল রাতে ঘুমের গহীনে তার পায়ের শব্দ পেয়েছি।
ভারি সন্তর্পণে দরজার হুড়কো খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখি,
ঝকঝকে বিকেলের চনমনে রোদটুকু বাড়ির পেছন দ্বারে,
খিড়কির ঐ পারে, তারের বেড়ায় ঘেরা,
লিচুর পাতার পরে, চকচক করে যেন ঝরে পড়ছে।
দূর থেকে মনে হলো প্রকাণ্ড বটগাছ,
আকাশের বুক ফুড়ে সটান দাঁড়িয়ে আছে।
আমি তাকে চিরকাল বটগাছ ভাবতাম।
যখন তখন তার হাত ধরে ঝুলে পড়া,
ঠিক যেন দোলনা বটের ঝুরি।
সে ছিলো বটের ডাল,
লাফ দিয়ে চড়ে বসা।
দুমদাম কাঁধে চড়ে, তামাম মাঠটা ঘুরে,
গাঁয়ের হাটের সেই বুন্দিয়া ভোগ।
হেমন্তে ঝরে পড়া বটের পাতার মতো
কাগজের টাকাগুলো ঝরে ঝরে যেতো,
গাঁয়ের পথেই যদি ফেরিওয়ালা হাঁক দিতো,
আলতার রাঙা শিশি, নীল ফিতা, কালো ক্লিপ,
রেশমী চুড়ির গোছা কোল ভরে যেতো।
গাঁয়ের মোড়েই যদি কুলফি মালাই এলো,
সিংহদরজাখানা হাট করে খোলা।
বুড়ো বটের গাছ সস্নেহে হেসে বলে,
সব পাবি পাখি তুই, মা বকবে?
দেখি তার কত্ত সাহস!
ছোট্ট পাখিটা যদি মায়ের বকুনি খেতো,
বটগাছ ছায়া দিতো দারুণ রোষে।
ছোট্ট পাখির সাথে সখ্যতা নেই আর, বটগাছ হারিয়েছে অচিন লোকে।
হঠাৎ কালকে রাতে স্বপ্নের অযুহাতে,
ফিরে এলো বটগাছ পাখির কাছে।
বাগানশুদ্দু নিয়ে দুটো হাত ভরা তার থোকা থোকা, গোছা গোছা আঙুরের ঝাঁক।
আমারই জন্য যেন সাজানো সে তশতরি,
ছোট্ট বেলার মতো আহ্লাদে গলে।
ঘুম ভেঙে মনে হলো ভোরের আযানে যেন তারই মিষ্টি গলা প্রাণে এসে লাগে।
প্রিয় পিতামহ তুমি,
তোমরাই বটগাছ, বটের ছায়া ছিলে, বাগানশুদ্দু ছিলে আঙুরের থোক।
তেমন শুদ্ধাচারী, উদার আকাশ আর কোথায় পাই গো বলো,
তোমরা এখন শুধু স্বপ্নের মতো।
আমাদের গ্রহটাতে জলজ আগাছা ভরা,
ফনিমনসার কাঁটা, বিছুটির ঝোপ।
প্রিয় পিতামহ তুমি, তোমরা যে পথে গেছো–
স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা সে পথে উধাও।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৭ জানুয়ারি ২০২২।