মেহেরুজ্জামান সেফু: বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ২৭.২১ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। পরিবেশগত বৈরিতা, সচেতনতার অভাব এবং অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা এদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের প্রধান অন্তরায়। এসব কারণে শিশুরা হয় বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
সহজ ভাবে বললে ইন্দ্রিয় ক্ষমতা, বুদ্ধি বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে যেসব শিশুর বিশেষ শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয়, সেসব শিশুকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলা হয়। যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলা হয় তাহলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলতে সেইসব শিশুদের বোঝায়, যারা সমবয়স্কদের তুলনায় বুদ্ধি সংবেদন, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, ভাব বিনিময় ক্ষমতা ও সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাত্রার কম বা বেশি হয় তাকেই ব্যতিক্রমী শিশু বলে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ যারা সাধারণের বাইরে তারাই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু।
ব্যতিক্রমধর্মী শিশুদের চাহিদা মেটানোর জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন তাকেই সাধারণত “বিশেষ শিক্ষা’’ বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের শিক্ষার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ধরনের সরঞ্জাম, উপকরণ এবং বিশেষ ব্যবস্থার। বর্তমানের সমম্বিত শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষক এবং বিশেষ শিক্ষক উভয়ই এই শিশুদের শিক্ষাপ্রদান করে থাকেন। সমম্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া এদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয়, আবাসিক বিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ব্যতিক্রমধর্মী এসব শিশুদের জন্য সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বর্তমান সময়ে সমাজের সচেতন তরুন যুবক ভবিষ্যতে সূদুরপ্রসারী প্রভাব ফেলার লক্ষে,বিভন্ন জয়গা থেকে বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে জনসচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন।
এই সচেতন নাগরিকদের একজন ফারিদ খান, যিনি নহর ইনিশিয়েটিভসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়মিত কাজ করছেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে।
ফারিদ খান তার এই কার্যক্রম সম্পর্কে জানান, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতির লক্ষে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠানটি এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই শিশুদের জন্য পেশাদার ও দায়িত্ববান মানুষ তৈরিতে উদ্ভদ্ধ করছেন।
এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের উন্নয়নের লক্ষে তাঁর প্রতিষ্ঠান যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে সেগুলো হলো,
ক. এই শিশুরা দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় স্কুলে ও চিকিৎসকের সাথে থাকেন। এর বাইরে এই শিশুরা সময় কাটান পরিবার ও সমাজের অন্য সব মানুষের সাথে। ফারিদ খান ও তার সংগঠনের ইচ্ছা হচ্ছে স্কুলে ও চিকিৎসকের বাইরের যে সমাজে এই শিশুরা সময় কাটান তাদের সচেতন করা। এই লক্ষে নহর ইনসিয়েটিভস এর উদ্যেগে স্ট্রিট শো সম্প্রচার শুরু করেছেন, এই জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান যা সংশ্লিষ্ট পেশা ও পেশার বাইরে সাধারণ মানুষকে তাদের ব্যাপারে জানতে এবং তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন হবার জন্য সচেষ্ট করছে । এর পাশাপাশি এই সেক্টরে কাজ করা মানুষগুলোকে সামনে নিয়ে এসে তাদের কাজগুলোকে তুলে ধরা এবং ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধনে একত্রিত করা এর সাথে জড়িত সকল মানুষকে এক বিশেষ প্রাপ্তি।
খ. যে সেবা সমূহ বর্তমানে বিদ্যমান আছে সে সব সেবা আরো আধুনিকায়ন করা এবং এই সব সেবা খাতের সাথে যারা জড়িত তাদের সচেতন করা।
গ. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই শিশুদের আরো কি কি সেবা প্রায়োজন সেই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করা।
ঘ. এই শিশুদের সার্বিক উন্নতির জন্য যে পরিমান জনশক্তি প্রয়োজন তা চাহিদার তুলোনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। ফারিদ খান ও তার প্রতিষ্ঠান সেই লক্ষে তরুণদের উদ্বুদ্ধকরনের কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া যারা এ সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে যুক্ত তাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করা।
ফারিদ খান নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রাথমিক পর্যায় থেকে এই উন্নয়নমূলক কাজ এর সাথে জড়িত। এছাড়া তিনি জার্মানির ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদ থেকে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এ উচ্চতর ডিগ্রি নেন এবং ইউএস মিশন পাকিস্তান এবং ইউনিভার্সিটি অব করাচী থেকে তিন মাসের ট্রেনিং অব ট্রেইনার এ অন্তর্ভুক্ত হন এবং একজন সফল ফেলো হিসেবে তা শেষ করেন। পাবলিক হেলথ এবং উন্নয়ন আর অর্থনীতির স্নাতকোত্তর এর পড়াশোনা তাকে আরও দক্ষ করে তুলেছে তার কাজে।
এমআই