আব্দুন নূর তুষার : দেশে করোনা বাড়ছে। এই বৃদ্ধি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী ও ভয়াবহ। এর কারণ হলো মানুষ দায়িত্বহীন আচরন করছে। সরকারী বিধিনিষেধের কোন প্রয়োগ নাই।
তারচেয়েও আশংকাজনক হলো নতুন ধরনের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। আমার একজন বড়ভাই, চিকিৎসক, টিকা কমপ্লিট করে ইউকে থেকে দেশে এসে ১ মাস পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যায় রোজ রেকর্ড তৈরী হচ্ছে। করোনা ভাইরাস গত বছরের মতো আচরন করছে না।
বহু আগেই ১০% ছাড়িয়ে ১৭% পর্যন্ত টেস্ট পজিটিভ হতে শুরু করেছে। প্রতিদিন ৪০ জনের বেশী মৃত্যুর সংখ্যা যা ভয়ংকর। এই নিয়ে অনেকের বক্তব্য আছে যে হাসপাতালের বাইরে মৃত্যু ঠিকমত রেকর্ড করা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশী। এর মধ্যে স্বাস্থ্যের ডিজি সহ অনেক কর্মকর্তা নিজেরাই করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেন।
সবকিছু জলের মতো পরিষ্কার হওয়ার পরেও দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ন্ত্রণকারী কর্তাব্যক্তিরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল আছেন যে, 'স্বাস্থ্যবিধি' মেনে ২ এপ্রিলেই তারা ১ লক্ষ ২২ হাজার ৮৭৩ জন পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নেবেন যেখানে কিনা দেশের বাকি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আরো ২-৩ মাস পর।
তাদের সেই তথাকথিত স্বাস্থ্যবিধির নমুনা বিসিএস পরীক্ষার দিন সারা দেশের মানুষ দেখেছেন। তাদের নিজেদের দলে দলে করোনা হওয়া দিয়েও বোঝা যাচ্ছে। নিজেদের অফিসের স্বাস্থ্য বিধি কেমন পোক্ত!
তারা যুক্তি দিয়েছেন
এখন পরীক্ষা না নিলে নাকি ৫ বছর পর পর্যাপ্ত ইন্টার্ন ডক্টর পাওয়া যাবে না। অথচ তারা গত বছর মেডিকেলের প্রফেশনাল পরীক্ষা সময়মত না নিয়ে সেশন জট তৈরী করেছেন। প্রাইভেট মেডিকেলগুলিকে ৯ মাস এরও বেশী সময় ধরে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন নিতে দিচ্ছেন আবার তারাই যখন ডাক্তার ছাটাই করেছেন ও বেতন কমিয়ে দিয়েছেন, তাদের বিষয়ে কোন ব্যবস্থাও নেন নাই।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রমজান মাস পার করে , আগের চেয়ে বেশী পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে এই পরীক্ষা নিলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব , পাশাপাশি ইন্টার্ন ডাক্তার না পাবার খোঁড়া যুক্তিটাও মোকাবেলা করা সম্ভব।
একজন পরীক্ষার্থী প্রশ্ন করেছে মেডিকেলে অলরেডি যারা পড়ছেন, সেই বড় ভাইয়া-আপুদের প্রফেশনাল পরীক্ষা যে ৭-৮ মাস পরে নেয়া হলো, সেক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ নিয়ে সমস্যা হবে না? শুধু এডমিশন টেস্ট ২ মাস পর নিলেই ইন্টার্নশিপের ঘাটতি এসে হাজির হচ্ছে?
১.মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন,বিধি মেনে নাকি পরীক্ষা নেওয়া হবে। তা কি আদৌ সম্ভব? যারা বিভাগীয় শহরে যাবে জেলা শহর থেকে, তাদের পরীক্ষার আগের দিন বিভাগীয় শহরে যেতে হবে। গিয়ে একটা হোটেলে থাকতে হবে পরিবার সহ। তারপর পরের দিন তারা পরীক্ষা দিতে যাবে। আর এই পুরো আসা যাওয়ার কাজ টা হবে গণপরিবহনে। গণপরিবহন বা হোটেল গুলোতে কি স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব? আর তাছাড়া পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থী, অভিভাবক সহ বাইরে আশে পাশের কর্মজীবি মানুষজন থাকবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা কিভাবে সম্ভব হবে?
শুধু তাই না হোটেল থেকে শুরু করে খাবার দোকান সব জায়গায় দু সপ্তাহ সব কিছু অর্ধেক করে ফেলতে বলা হয়েছে সরকারী নির্দেশে। সবাই খাবে কোথায় থাকবে কোথায়? কেন্দ্র ডাবল করলেন আর থাকা খাওয়ার জায়গা অর্ধেক। এটা হলো পায়জামা নিচে পরে হাফপ্যান্ট ওপরে পরার মতো হাস্যকর।
২. বলা হয়েছে কেন্দ্র সংখ্যা দ্বিগুণ যার কারণে নাকি স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব। কিন্তু এবার শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দ্বিগুণ। অংক শিক্ষায় অনুপাতের অংকের ক্লাস করানো দরকার। কি বলেন? অনুপাত এর উত্তর হবে ১:১।
৩. গণপরীক্ষার আয়োজন করে বাকি সব সুবিধা অর্ধেক করলে সেটা কি স্বাস্থ্যবিধি মানলেও স্বাস্থ্যের জন্য সুবিধাজনক? গণপরিবহনে ৫০% আসন । বাস কি দ্বিগুন হবে? তাহলে ৫০ জনের জন্য আগে একটা বাসের জায়গায় এবার দুটো বাস লাগবে। সেটা অফসেট করতে একদিনের জায়গায় দুদিন আগে রওনা দিতে হবে কাউকে কাউকে। খরচ, সময় ব্যয়, ঝুঁকি সবই বাড়বে।
৪. এর চেয়ে কম সংখ্যক পরীক্ষার্থী আছে এমন পরীক্ষাও পিছিয়েছে যেমন : এ, ও লেভেল পরীক্ষা, মৎস্য অধিদপ্তরের পরীক্ষা,সাত ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা, এবং বিসিএস পরীক্ষার ভাইভাও এই করোনার জন্য জুনে রাখা হয়েছে। তাহলে কেনো মেডিকেল পরীক্ষা এই মহামারীর ভিতরেই নেওয়া হচ্ছে?
৫. শুধু পরীক্ষার ১ঘন্টার স্বাস্থ্যবিধি মানাই কি সব?
এবার শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেকে তাদের পছন্দের কেন্দ্রে আসন পায়নি। সে যেই বিভাগে কেন্দ্র পছন্দ করেছে সেই বিভাগের আসন বুকিং হয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই অন্য বিভাগে আসন দিয়েছে। একজনের বাড়ি পটুয়াখালী অন্যজনের বাড়ি কুয়াকাটা। তারা তাদের কাছে বরিশাল কেন্দ্র দিলেও তাদের একজনের কেন্দ্র পড়েছে গোপালগঞ্জ, অন্যজনের ফরিদপুর। এইরকম হাজারো শিক্ষার্থী রয়েছে।
এই পরীক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানসম। জোর করে এই সময় এই ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী গণজমায়েত সীমিত করে, করোনা নিয়ন্ত্রণে এনে সংক্রমনের হার অন্তত ৫% এর নীচে গেলে পরীক্ষা আয়োজন করাই সংগত। রমজান মাস পার করে ২ মাস ধেকে ৩ মাস পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করি।
মানুষকে হুকুমের দাস মনে করার এই ভাবনা থেকে বের হয়ে, দয়ার্দ্র মনে তাদের সন্তানের মতো ভালোবেসে, তাদের সুবিধা অসুবিধাগুলি বিবেচনা করেন। প্রাইভেট মেডিকেলের ব্যবসার চিন্তা মাথা থেকে সরান।
নিজেকে , নিজের সন্তানদের নিরাপদে রাখতে এই বিপদজনক সময়ে দুই এপ্রিলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে অন্তত দুমাস থেকে তিনমাস পরে পরীক্ষা নেন।
পরীক্ষা নাহয় নিলেন। ভর্তির পর ক্লাস নেবেন কি অনলাইনে না অফলাইনে? হোস্টেলে সীট দিতে পারবেন? সময় মতো সব প্রফেশনাল পরীক্ষা নেবেন তো? ফরেনসিক মেডিসিনের যে শিক্ষক নাই। মানসিক রোগের যে শিক্ষক নাই। অ্যানাটমি ফিজিওলজিতে যে শিক্ষক নাই। এগুলো নিয়ে একটু পরিকল্পনা কি সেটা বলবেন? খালি ভর্তি করেই দায়সারা? শাহমখদুমের কি করলেন? নর্দার্ণ এর?