সব ভেদাভেদ ঘুচবে সেথায়
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
আচ্ছা মাগো, জান্নাতে কি আপেল পাওয়া যায়?
আপেল কেন? খেজুর, আঙুর যা চাবি তাই হয়।
ঐ যে বড়ো দোকানটাতে কেক সাজানো থাকে,
তারই পাশে কত্ত মিঠাই গুছিয়ে কেমন রাখে।
আমার তো মা ইচ্ছে ভারি পেট পুরে সব খাই,
কিন্তু ওরা দেয়না খেতে, পয়সাকড়ি নাই।
প্রতিমাসে কর্তা মায়ের বাসন মাজার টাকা,
আনো যখন, ধার শোধে যায়, আবার দু'হাত ফাঁকা।
তাই তোমাকে বলিনা মা, কোথায় পাবে কড়ি?
বড্ড আমার ইচ্ছে করে রঙিন কিতাব পড়ি।
ঐ যে মোড়ের দোকানটাতে, বইঘর নাম যার,
কতো যে বই আছে মা গো হাজারে হাজার।
আমার যখন পিঠে বোঝা, চকোলেটের ফেরি,
ঐ দোকানের সামনে এলেই, একটু করি দেরি।
দাঁড়িয়ে খানিক দেখি গো মা প্রাণ জুড়িয়ে যায়,
আহা! ওমন একখানা বই আমার কাছে নাই।
সকালবেলা ইশকুলে যায় কত্ত ছেলেমেয়ে,
গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আমি দেখি কেবল চেয়ে।
না, না, শুধু দেখি নাতো, দেইনা কাজে ফাঁকি,
চকোলেটও বেচি আমি, কাজ রাখিনা বাকি।
বিকেলবেলা সবাই যখন খেলার মাঠে যায়,
কত্ত দামি বলটা গো মা, অনেক টাকার দায়।
কেউ আমাকে নেয়না খেলায়, জামাটা যে ছেঁড়া,
নেবে কি গো, মাঝখানে যে মস্ত বড়ো বেড়া।
কিসের বেড়া? তাও জানোনা? দালানে বাস করে,
ওদের সাথে আমার কুঁড়ে মিলবে কেমন করে?
ওমা, তুমি কাঁদছো কেন? বড্ড তুমি বোকা,
ভাবছো বুঝি মুষড়ে পড়ি? তেমন তোমার খোকা?
মোট্টেও তা সত্যি না মা, আমার কথা শোনো,
এসব নিয়ে, তোমার ছেলের দুঃখ তো নেই কোনো।
এই যে তুমি বললে আমায়, জান্নাতে সব আছে,
সব ভেদাভেদ ঘুচবে সেথায়, আমার রবের কাছে।
মণ্ডামিঠাই, যা কিছু চাই, সাজিয়ে থরে থরে,
গুছিয়ে দেবেন প্রভু, আমার সম্মুখেতে ধরে।
তা হলে আর চিন্তা কিসের? দেখনা চোখ খুলে,
এমন জীবন করবো গঠন, দুঃখ যাবে ভুলে।
জীবন হবে প্রশংসিত, প্রভুর মায়াময়,
সেই মায়াতেই জান্নাতি সুখ, জয় হবে নিশ্চয়।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।