শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: কেটে দেয়া লাইনে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযযোগ দিতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ গুনেও মিলছে না সংযোগ। সেচের অভাবে ১১০ বিঘা জমির বোরো ক্ষেত ফেঁটে চৌচির।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বোরো চাষের সর্বচ্চ ফলনশীন এলাকা উত্তর গোবদা গ্রাম। এ গ্রামে শত শত বিঘা জমিতে তেল চালিত শ্যালোমেশিনের সেচে প্রতিবছর বোরো চাষাবাদ করতেন চাষিরা। এ ফসলেই চলে এ গ্রামের মানুষের সংসার। গত ২০১৮ সালে সেচ সংকট দুর করতে স্থানীয় কৃষক মৃত আসমত আলীর ছেলে মোক্তার আলী পল্লী বিদ্যুৎ অফিস আদিতমারীতে যোগাযোগ করে সেচ পাম্পের অনুমোদন গ্রহন করেন। নিজের টাকায় ট্রাসফরমার ক্রয় করে সেচ পাম্পের সংযোগ নেন। যার হিসাব নং -০৭/২৬৫/১০১২। সেই থেকে ওই গ্রামের ১১০ বিঘা জমির বোরো ক্ষেতে সেচ প্রদান করছেন। বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের কারনে বোরো ফলনও বেড়েছে।
চলতি বোরো মৌসুমেও ওই সেচ পাম্পের আওতায় ১১০ বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করেন গ্রামের চাষিরা। ঊর্দ্ধমুখি বাজারে নিজে না খেয়েও বোরো ক্ষেতে সার ও সেচ প্রদানসহ নিয়মিত পরিচর্যা করছেন কৃষকরা।
গত ৩ মার্চ সেই সেচ পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদিতমারী সাব জোনাল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী(ডিজিএম) প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল। সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারণ জানতে চাইলে সেচ পাম্প মালিক মোক্তার আলীকে অফিসে ডাকেন তারা।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ৯ দিন ধরে ১১০ বিঘা বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না চাষিরা। ফলে তাদের ক্ষেত ফেঁটে চৌচির হয়েছে। কষ্টে লাগানো বোরো ক্ষেত রক্ষায় কৃষকরা প্রতিদিন সেচ পাম্প মালিকের বাড়িতে চাপ দিয়েও কোন সুফল পাচ্ছেন না।
কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গত ৪/৫ বছর ধরে এই সেচ পাম্প থেকে সেচ নিয়ে বোরো চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছি। এবার বোরো চাষের মধ্যবর্তি সময় হঠাৎ সেচ বন্ধ করায় বোরো ক্ষেত মরে যাচ্ছে পানির অভাবে। সেচ পাম্প মারিক বলছে বিদ্যুৎ অফিস অযথা লাইন কেটে দিয়েছে। তারা যদি লাইন কেটে দিবে। তবে চাষাবাদ শুরুতে কেন কাটলো না? । তখন কাটলে তো আমরা বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করে চাষাবাদ করতাম। এখন ভরা ক্ষেতে সেচ কোথায় পাই। পানি না দিলে ক্ষেত তো মরে যাবে। ধান না হলে তো পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এখানে দুই-এক বিঘা নয়। একশত ১০ বিঘার জমির ধান নষ্ট হতে বসেছে। দ্রুত সংযোগ দিয়ে বোরো ক্ষেত রক্ষার দাবি জানান তিনি।
সেচ পাম্প মালিক মোক্তার আলী বলেন, নিজের টাকায় ট্রাসফরমার কিনে ৫ বছর ধরে এই বডিং থেকে ১১০ বিঘা জমির সেচ দিচ্ছি। বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া নেই। হঠাৎ গত ৩ মার্চ বিদ্যুতের ডিজিএম এসে লাইন কেটে দেয়। কারন জানতে চাইলে তারা আমাকে অফিসে আসতে বলেন। আমি গত ৭ তারিখ অফিসে গেলে ডিজিএম একটি খাবার হোটেলে নিয়ে কথা বলেন। এসময় তিনি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারা পরদিন সংযোগ দেয়া কথা দিলেও তা আজও দেয়নি। পানির অভাবে বোরো ক্ষেত ফেঁটে চৌচির হয়েছে। মরে যাচ্ছে মধ্য বয়স্ক বোরো ধানের গাছ। তাদের চাহিদামত টাকা দিয়েও সংযোগ নিতে পারছি না। সরকারের ঊর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
পল্লী বিদ্যুতের হাজীগঞ্জ সাব স্টেশনের ইনচার্জ মোর্শেদ আলম বলেন, অনুমোদনকৃত স্থান থেকে বোয়িং সড়ায়ে নেয়ায় মোক্তার আলীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পুর্বের স্থানে ফিরে গেলে সংযোগ দেয়া হবে। অন্যথায় বোরো নষ্ট হলেও সুযোগ নেই। ৪ বছর ধরে চললেও সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন। তারা বলতে পারবে। তবে ঘুষের ১০ হাজার টাকা গ্রহনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদিতমারী জোনাল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী(ডিজিএম) মোস্তফা কামাল ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যে স্থানে অনুমোদন দেয়া ছিল। সেখান থেকে বোয়িং সড়ানো হয়েছে। তাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ৪ বছর আগে কারা অনুমোদন দিয়েছে তা আমার জানা নেই। আমি অনিয়ম পেয়েছি, তাই বিচ্ছিন্ন করেছি। শত বিঘা কেন? হাজার বিঘা বোরো নষ্ট হলেও অনুমোদিত স্থানে না গেলে সংযোগ হবে না। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, জীবনে একটি টাকাও অবৈধ গ্রহন করিনি।