ওয়াজেদুল হক, মেহেরপুর প্রতিনিধি: জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২’ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কার প্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে পদক পাচ্ছেন মেহেরপুরের কৃতি সন্তান, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস।
তৎকালীন সময়ে ছহিউদ্দিনকে দেখলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতেন ‘আমার রাজধানীর (মুজিবনগর)
এমপি ছহি।’ মরনোত্তর স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত মরহুম মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস -এর রাজনৈতিক জীবন ছিল বেশ বর্ণাঢ্যময়। তিনি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন নদিয়া জেলার অন্তর্গত মেহেরপুর মহকুমার তেহট্ট থানাধীন বেতায় লালবাজার গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন বিশ্বাস এবং মাতার নাম মোছাম্মৎ ছামসুন নেছা।
তিনি চুয়াডাঙ্গা ভি.জে. হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর কৃষ্ণনগর ও রাজশাহী সরকারি কলেজে পড়াশুনা করেন।
১৯৫০ খ্রি. তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর ১৯৫১ খ্রি. তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা
করেন। ১৯৫১-১৯৫৮খ্রি. ও ১৯৬৪-১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক ও সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ খ্রি. মহকুমা সভাপতি, ১৯৭২ খ্রি. প্রথম মেহেরপুর (সাংগঠনিক)
জেলা সভাপতি, ১৯৭৩-১৯৭৫খ্রি. জেলা সভাপতি এবং আমৃত্যু (১৯৯০ খ্রি.) মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন মেহেরপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি সহ ৪০ বছর নেতৃত্বে দেন। ১৯৫২ খ্রি. ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে সকল গণআন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ খ্রি. তিনি তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি বিশেষ সক্রিয় ভূমিকা নেন। তিনি মুজিবনগরে অভ্যর্থনা শিবির ও গেরিলা শিবির প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি ৮ নম্বর সেক্টরে ‘৩’ সি কোম্পানীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন।
১৯৭২-৭৩ খ্রি. মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন মেহেরপুর মহকুমা সাহায্য ও পূণর্বাসন কমিটি এবং রেডক্রসের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭২ খ্রি. থেকে ১৯৭৫ খ্রি. মে মাস পর্যন্ত মেহেরপুর মহাবিদ্যালয়-এর গভর্ণিং বডির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বহুদিন
মেহেরপুর মহকুমা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ১৯৫৮-৬৫ খ্রি. মেহেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ও কমিশনার ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন মেহেরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ও বড়বাজার মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
এছাড়া বিভিন্ন সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানের সাথেও যুক্ত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ১৯৭০খ্রি., ১৯৭৩খ্রি. ও ১৯৮৬খ্রি. জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি ১৯৭২ খ্রি. গণ-পরিষদ সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে স্বহস্তে স্বাক্ষরকারী এমসিএ ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ খ্রি. বঙ্গবন্ধু ঘোষিত মেহেরপুর জেলার গভর্ণর মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি আমৃত্যু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। আজীবন বাঙালী অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক-বাহক মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন ২১মার্চ ১৯৯০খ্রি. মেহেরপুরে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি জাতির পিতার সহযোদ্ধা হিসাবে যেমন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাথেও তাঁর আমৃত্যু সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
তাঁরই এক যোগ্য সন্তান ফরহাদ হোসেন বর্তমানে মেহেরপুর-১ আসনের এমপি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী। রাজনৈতিক অঙ্গনে এরই মধ্যে তিনিও বেশ সুনাম অর্জন করেছেন।
এমআই