পুরান পাপের দায়
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
গেল বছর কাল বোশেখে ভাঙলো বানুর ঘর,
সেই বছরই হঠাৎ করে মরলো মেয়ের বর।
তাগড়া জোয়ান ছিলো ব্যাটা, দু'দিনের এক জ্বরে,
যেমনি এসে শয্যা নিলো, অমনি গেলো মরে।
বাবার থানে ছোটাছুটি, সবই হলো সার,
লাল তাগাতে বাঁধলো বানু পীর বাবাজির দ্বার।
কম সে তো নয়, একশ টাকার মোমবাতি, ধুপ জ্বেলে,
মাজার গায়ে সিজদা দিলো মনের আবেগ ঢেলে।
কবিরাজের কড়া ওষুধ, তাবিজ-কবজ যত,
মেয়ের গায়ে, হাতে, পায়ে বাঁধলো শতশত।
যে যা দিলো জ্বরের নিদান, তাই আনতে ছুটে,
কতো সাধের ধবলি গাই বেচলো বানু হাটে।
বলেছিলেন মাস্টার সাব, হাসপাতালে নাও,
ধমকে দিলেন পীরের খাদেম, দোযখ যেতে চাও?
পীর বাবাজি জাগ্রত প্রাণ, গোরের মাঝে শুয়ে,
অভিশাপে, চৌদ্দ পুরুষ দেবেন তোমায় ধুয়ে।
তার'চে বরং, ধবলি বেচা টাকাগুলো এনে,
বাবার থানে বাক্সখানা, বিলাও গুনেগুনে।
সিজদা করো, জিকির কর, কপাল ঠুকে ঠুকে,
দেখবে তোমার মেয়ের বরের প্রাণ ফিরবে বুকে।
ভয়ের চোটে পালায় পরাণ, বানুর এমন দায়,
পীরের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি যে তার নাই।
তাই বেচারা ছুট্টে গিয়ে, ধবলি বেচা টাকা,
গুনেগুনে বাক্সে দিলো, করলোনা মন বাঁকা।
সিজদা দিলো কবরগাহে কপালখানা ছুঁয়ে,
যেমন চোরা নাকখত দেয়, ভূমির পরে থুয়ে।
দাওনা বাবা ফিরিয়ে, আমার মেয়ের সুখের ঘর,
তোমার দয়ায় প্রাণ ফিরে পাক, আমার খুকির বর।
আকাশ সমান বিশ্বাসেতে, বানুর চোখে পানি,
বললো খাদেম, ভয় কিরে তোর? ফিরবে পরাণখানি।
এত্তগুলো টাকা দিলি বাবার বাক্স ভরে,
বাঁচবে জামাই, হাসিমুখে যা ফিরে তুই ঘরে।
বুক ধুকপুক আশা নিয়ে ঘরে ফিরে দ্যাখে,
প্রাণপাখি তার পালিয়ে গ্যাছে, দেহখানা রেখে।
সবটা শুনে খাদেম বলে, কপালে দোষ ছিলো,
আগের জন্মে পাপ করেছে, তারই মাশুল দিলো।
দুঃখে বানুর বুক ফেটে যায়, পুরান পাপের দোষে,
জাগ্রত বাপ প্রাণ দিলোনা, হারলো বানু শেষে।
এমনি করে কত্ত বানু পুরান পাপের দায়ে,
বিষয়-আশয়, ঈমান ভাসায় পীরের মাজার গায়ে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২