সময় জার্নাল প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অষ্টম অংশীদারি সংলাপ আজ রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংলাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের তরফে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানানো হতে পারে। এছাড়া সংলাপে নিরাপত্তা, ইউক্রেন ইস্যু, সামরিক সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
ঢাকায় আয়োজিত এই সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আর মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপ শেষে দুপুর দেড়টায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাংবাদিকদের ব্রিফ করার কথা রয়েছে।
সংলাপে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতিসংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড শনিবার বিকালে ঢাকায় পৌঁছেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নুল্যান্ডকে স্বাগত জানান।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ১৯ থেকে ২৩ মার্চ বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা সফর করবেন। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অঙ্গীকার ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করতে তার এই সফর।
ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় অংশীদারি সংলাপ এবং নয়াদিলিতে ফরেন অফিস কনসালটেশন করবেন। প্রতিটি দেশেই নুল্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব জোরদার করা এবং শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে সিভিল সোসাইটি ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। প্রতিনিধি দলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এবং প্রতিরক্ষাবিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি আমান্ডা ডোরিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ঢাকায় নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে এবারের অংশীদারি সংলাপকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অংশীদারি সংলাপ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আরও দুটি প্ল্যাটফরম রয়েছে। এর একটি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপ, অপরটি বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনার জন্য অর্থনৈতিক সংলাপ। তবে অংশীদারি সংলাপে যেহেতু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে; এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যু উত্থাপন সম্ভব।
বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের লেহি আইনের অধীনে মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তা পেতে মানবাধিকার সুরক্ষা বাধ্যতামূলক। এই শর্ত দিয়ে একটি ফর্মে সই করার জন্য বাংলাদেশকে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখনো পর্যন্ত তা সই করেনি বাংলাদেশ। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, শর্তটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সংস্থা হিসাবে র্যাব এবং র্যাবের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তার বিষয়ে অনেক ইস্যু খুবই স্পর্শকাতর বলে মনে করে বাংলাদেশ। এসব ইস্যু দীর্ঘ মেয়াদে নেগোসিয়েশন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এসব ইস্যু নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এপ্রিলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এসব ইস্যু উত্থাপন করা হলে বাংলাদেশ ইস্যুগুলোকে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপে আলোচনার অনুরোধ জানাবে। তবে এসব বিষয়ে প্রস্তুতি এবং বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণ করে রাখার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে অর্থনৈতিক সংলাপ। ফলে চলতি বছরে দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যু আলোচনার টেবিলে উঠছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকা ও কক্সবাজারের কাছে বিনিয়োগ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হবে। নীল অর্থনীতির বিষয়ে বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করা হতে পারে। সমাজের অনগ্রসর অংশের মানুষ যাতে বিচার পেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে মার্কিন সহায়তাসংক্রান্ত একটি চুক্তির বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
অংশীদারি সংলাপে জলবায়ু পরিবর্তন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তা, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খনিজসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, নৌপরিবহণ প্রভৃতি খাতে মার্কিন সহায়তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।