দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি এতিমখানার নামে ক্যাপিটেশন গ্ৰান্টের বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই কাগজে কলমে নাম মাত্র এতিম দেখিয়ে গোপনীয় ভাবে ব্যাবস্থাপনা কমিটি তৈরি করে এ অনিয়ম করছে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানেই ঐ এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছে।
অনেক প্রতিষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ক্যাপিটেশন গ্ৰান্ট প্রাপ্তির কোন সাইনবোর্ড টাঙ্গানো নেই। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে অল্পসংখ্যক এতিম থাকলেও মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
জানাগেছে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতি ৬ মাস পর পর বরাদ্দকৃত বিলের চেক হস্তান্তর করার সময় প্রতিষ্ঠান প্রতি বড় অংকের উৎকোচ আদায় করে অনিয়ম গুলোকে বৈধতা দিয়ে থাকে।
সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী সইফুল ইসলাম সহ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী টাকার বিনিময়ে ভূয়া বিলভাউচার তৈরি করে দিয়ে এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানাগেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি এতিমখানার সভাপতি, সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, বরাদ্দ করাতে উপজেলা ও মন্ত্রণালয়ে পয়সা দিতে হয়, এমনিতে কোন কিছুই হয় না। আমরা টাকা দিয়েই টাকা আনি।
কোটালীপাড়া উপজেলায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১৬টি এতিমখানার অনুকূলে ৫৯০ জন এতিমের নামে প্রতি বছর ১ কোটি ৪১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এ হিসাবে প্রতি জন এতিমের মাসিক মাথাপিছু বরাদ্দ ২ হাজার টাকা। বরাদ্দ কৃত অর্থ ছয় মাস পর পর ২ টি কিস্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এতিমখানার নামে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়নে বিতরণ করা হয়।
প্রকৃত পক্ষে সরকারের এই মহতী উদ্যোগ কোটালীপাড়ার এতিমখানা গুলোয় সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের প্রতিনিধি সরেজমিনে এতিমখানা গুলো পরিদর্শন করে ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত এতিম না থাকার দৃশ্য দেখতে পায়। পরিদর্শনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র ও এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারে এতিম থাকার কথা বলে সরকারি দপ্তর থেকে বড় অংকের টাকা বরাদ্দ আনলেও প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের গ্ৰামে গ্ৰামে লজিং দেওয়া হয়। যাদের গ্ৰামে লজিং না হয় তাদের নির্ধারিত বডিং খরচ দিয়ে খেতে হয়। এছাড়াও প্রতিটি ছাত্রদের কাছথেকে প্রতি মাসে বাধ্যতামূলক বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হয়।
উল্লেখযোগ্য অনিয়ম কারি প্রতিষ্ঠান গুলো হচ্ছে, আশুতিয়া আসরাফিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, বরাদ্দ পাওয়ার পরিমা-৪০ জন এতিম, কুশলা নেছারিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা-২৭, কুরপালা এতিমখানা-১৯০ জন, এবং পুর্ব উত্তর কোটালীপাড়া ছালেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসা সংলগ্ন এতিমখানা-১৪ জন। এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তির পকেটে যাচ্ছে এতিমদের বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ।
এসকল অভিযোগের বিষয়ে সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভ বলেন, ইতিপূর্বে আমরা তদন্ত করেছি, অনেক এতিমখানায় অনিয়ম থাকায় বরাদ্দ কমানোর সুপারিশ করলেও মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ কমায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস অহিদ জানান, কোন অবস্থাতেই এতিমের টাকা লুটপাট হতে দেওয়া হবে না। প্রত্যেক টি প্রতিষ্ঠানকে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমআই