অনুপম মল্লিক আদিত্য, জবি প্রতিনিধি:
পুরান ঢাকা নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে যানজটের দৃশ্য। আর বাস্তবে তা ভোগান্তি। এমন চিত্রই যেনো মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।
কেরানীগঞ্জের ওপারে চুনকুটিয়া চৌরাস্তা থেকে বাবুবাজার সেতু হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত যানজট। সড়কজুড়ে মাল বোঝাই ঠেলাগাড়ি, কাভার্ড ভ্যান, লেগুনা, রিকসা, বাস ও ট্রাকের সারি। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও হাসপাতালগামী রোগীসহ দূরপাল্লার যাত্রীরা।
পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, নয়াবাজার, বংশাল, ইমামগঞ্জ, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, শহীদনগর, ইসলামপুর, সদরঘাট, লক্ষ্মীবাজার ও বাংলাবাজার এলাকা স্বল্প দূরত্বের মধ্যেই। এক স্থান থেকে হেঁটে অন্য গন্তব্যে যেতেও সময় লাগে বড়জোর আধ ঘণ্টা। আর রিকশা বা গাড়িতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এমনকি বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর ওপারে কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকা থেকে এসব স্থানে আসতেও এর চেয়ে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু একবার যানজট শুরু হলে তিন ঘণ্টায়ও গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
বংশাল এলাকার বাইসাইকেল ব্যবসায়ী জহুরুল হোসেন বললেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, উন্নয়নের নামে দীর্ঘ সময় রাস্তাঘাট বন্ধ রেখে খোঁড়াখুঁড়ি ও রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যসামগ্রী রাখায় যানবাহন চলাচলের পথ সরু হয়ে গেছে। অবস্থা এমন যে, যানজটের কারণে পুরান ঢাকার মানুষের শ্বাস নেয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।’
সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড আর পার্কিংয়ের কারণে প্রতিদিনই যানজটে স্থবির হয়ে থাকছে পুরান ঢাকার ফুটপাত, অলিগলি ও মহাসড়ক।
নয়াবাজার পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য রকিবুল ইসলাম বলেন, যানজটে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সময়মতো হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে না পারায় সড়কে অ্যাম্বলেন্সেই রোগী মারা যাওয়ার দৃশ্যও দেখতে হচ্ছে এখানে দাঁড়িয়ে।’
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সড়কে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার নানামুখী সংস্কার কাজ লেগেই আছে। এর ফলে গাড়ি চলাচলের জন্য পুরো রাস্তা ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। আবার অলিগলি কেটে একাকার করে রাখায় মূল সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। অথচ এ দুটি প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে কাজ করলে দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা এভাবে বেহাল অবস্থায় থাকতো না। সাধারণ মানুষকেও এভাবে বছরজুড়ে যানজটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’
রাস্তার বড় অংশ দখল করে অবৈধ স্ট্যান্ড বানানো যানজটের আরেকটি অন্যতম কারণ। কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে বাবুবাজার লাইনে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, কাভার্ড ভ্যান, অটোরিকশা ও দূরপাল্লার বাস বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দু-পাশ দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়েছে।
এসব যানবাহন রাস্তায় চলতে গিয়েও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করে না। সেতুর দুপাশে দুটি করে মোট চারটি সিঁড়ির পাশেই নিয়মিত বাস ও অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা হয়। যেখানে সেখানে গাড়ি থামানোর কারণে যখন তখন যানজট লেগে যায়।
কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ থানা এলাকার চুনকুটিয়া থেকে শুরু করে কদমতলীর গোলচত্বর হয়ে, বাবুবাজার, বংশাল, নিমতলা, আনন্দনগর, বঙ্গবাজার, ফুলবাড়িয়া, লক্ষ্মীবাজার, ওয়ারী, মতিঝিলসহ আরো কিছু স্থানে কয়েক হাজার অটোরিকশা, কাভার্ড ভ্যান, ইজিবাইক, রেন্ট এ কার এবং যাত্রীবাহী বাস অবৈধ স্ট্যান্ড বানিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলাচল করছে।
এর ফলে পুরান ঢাকা জুড়ে যত্রতত্র যানজট লেগে থাকছে দিনের অধিকাংশ সময়। ট্রাফিক পুলিশও এসব অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে উদাসীন। ফলে যানজট কবে কীভাবে দূর হবে তা বলতে পারেন না কেউই।
এমআই