এহসান রানা, ফরিদপুর:
অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের অবৈভাবে মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রায় প্রতি বছর রমজানেই বাড়তি মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে হয় সাধারণ মানুষের। তাই রোজার মাস আসার আগেই মনে একটা শঙ্কা তৈরী হয় মানুষের মধ্যে। তবে এবারে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করায় সে শঙ্কা দূর হয়েছে, তাদের মধ্যে এসেছে স্বস্তি। ক্রেতা সাধারণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। ফরিদপুরের টিসিবির পণ্য ক্রয়ে আসা সাধারণ জনসাধারণের সাথে কথা বললে এ চিত্রই বের হয়ে এসেছে। তবে ক্রেতাসাধারণ পণ্যের পরিমান ও প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার করে বছরব্যাপী পণ্য বিক্রি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ করেছেন।
(২৯মার্চ) মঙ্গলবার সকালে জেলার মধুখালী ও বোয়ালমারী উপজেলায় টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, ফ্যামিলি কার্ডে কম দামে টিসিবির তেল, ডাল ও চিনি বিক্রি চলছে। প্রতি পরিবারের মাঝে রমজান উপলক্ষে ৪৬০ টাকায় ২ কেজি তেল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি ডালের প্যাকেজ বিক্রি করছে টিসিবি। বাজারে একটি প্যাকেজের এসব পণ্যের মূল্য সাতশো টাকারও বেশি। রমজানের আগে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে এসব নিত্য পণ্য কিনতে পেয়ে খুশি নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষ।
মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের দস্তরদিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কাঞ্চন বেগম জানান, তার পাঁচজনের পরিবারে রোজার আগে কমদামে এসব পণ্য কিনতে পেরে খুব উপকার হয়েছে। সারা বছরই যদি সরকার তাদের মতো পরিবারগুলোর জন্য এভাবে ভর্তুকি মূল্যে নিত্য পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে তাহলে বিনা চিন্তায় খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারবেন। বকশি চাঁদপুরের রুবিয়া বেগম বলেন, ‘শেখের বেটি কম দামে জিনিস দিছে। আমাগো উপকার হইছে। কিন্তু এইট্যে সপ্তায় একবার না অয়লিও মাসে একবার দিওয়া উচিত। তাইলে আমাগো খুবই উপকার অয়।’
এলাহীপুরের আবু বকর মোল্লা বলেন,‘সরকারের এই উদ্যোগটা ভাল। প্রত্যেক রোজার আগে দোকানদাররা দাম বাড়ায়ে দেয়। এবার আর তা পারতেছে না। শেখের বেটি এই মাল দিছে। এখন দোকানদারদের কাছে কম যাওয়া লাগবি, আমাগো টেনশন একটু কমছে।’ তিনি অনুরোধ করে বলেন, ‘সরকারের উচিত সারা বছর এইটা চালু রাখা।’ বোয়ালমারীর গুনবহা ইউনিয়নের শোয়েব আলী বলেন, ‘বাজারের দামের চেয়ে কম দাম হওয়ায় আমাগো খুব উপকার হইছে। তবে মালটা বাড়ালি আরো ভাল অবি।’
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় টিসিবির ৬২ জন ডিলারের মাধ্যমে ৭৭ হাজার ৬০৫টি পরিবারের ফ্যামিলি কার্ডে ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা এব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর রয়েছেন। ফ্যামিলি কার্ডে একটি পরিবার একমাসের ব্যবধানে দুইটি কার্ডে দুইবার পণ্য কিনতে পারছেন। ৩০ মার্চ পর্যন্ত প্রথম দফার পণ্য বিক্রি শেষে রোজার মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে এসব পণ্যের সাথে অতিরিক্ত ২ কেজি ছোলা বিক্রি করা হবে।
জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ১২৬ জন এবং ডিলার ০৩ জন; ভাঙ্গা উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৩৯০ এবং ডিলার ১৩ জন; বোয়ালমারী উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০৪ জন এবং ডিলার ০৭ জন; সদরপুর উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮৩৪ জন এবং ডিলার ০৫ জন; সালথা উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৪৫ জন, এবং ডিলার ০৭ জন; চরভদ্রাসন উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮৪১ জন এবং ডিলার ০৬ জন; মধুখালী উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ২১৯ জন এবং ডিলার ০৬ জন; নগরকান্দা উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ২০৭ জন এবং ডিলার ০৬ জন; ফরিদপুর সদর উপজেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার ০৩৬ জন এবং ডিলার ০৯ জন। জেলায় মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৬০৫ জন এবং মোট ডিলারের সংখ্যা ৬২ জন। জেলায় মোট বিতরণকৃতব্য পন্যের মধ্যে সয়াবিন তেল ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২০০ লিটার, চিনি ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং মুশুর ডাল ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন রয়েছে।
এমআই