নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বমানের কসমেটিকস পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জে দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি ও স্কিন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটি জানায় ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্যতম সেরা কসমেটিকস ও স্কিন রিসার্চ সেন্টার হিসেবে নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করাই তাদের লক্ষ্য। রিমার্ক এল এল সি, ইউএসএ’র এফিলিটেড সংস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে ইউরোপ আমেরিকার স্বনামধন্য প্রোডাক্ট রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সংস্থায় আরএনডি বা গবেষণায় বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করেছে ।
ইউরোপ ও আমেরিকার বহুল প্রচলিত কসমেটিকস পণ্যগুলো গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের আবহাওয়া, ত্বকের ধরণ ও চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত করা হচ্ছে।
অভিজ্ঞ মেকআপ আর্টিস্ট এবং ট্রেইনার সালেহা সারওয়ার বলেন, দেশীয় বাজারে মানহীন কসমেটিকসের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশে কালার কসমেটিকস এর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোন মানসম্মত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখানে নেই, যা সত্যিই খুব দুঃখের বিষয়।
মূলত দেশীয় বাজারে মানহীন কসমেটিকস পণ্যের কারণে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে আমদানি নির্ভর এই শিল্পে বছরের পর বছর ধরে চলছে শুল্ক কর ফাঁকি দেয়ার মহোৎসব, যাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকার ও জনগণ।
দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি আয়ের উৎস রেডিমেট গার্মেন্টস হলেও এই খাতটির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা আবশ্যক। উন্নত টেকনোলজি নির্ভর শিল্পখাতে জোর দিতে হবে যেমন- কেমিক্যাল, আইটি, ইলেক্ট্রনিক্স ও কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি।
প্রাসঙ্গিকভাবে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের একপোর্ট ভলিয়্যুম ১ বিলিয়ন ডলার থাকলেও ২০২১- এ বাংলাদেশ রপ্তানি খাত থেকে আয় করেছে ৪৪.২২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামের রপ্তানি আয় প্রায় ৩৩৬.২৫ বিলিয়ন ডলার।
উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান মাত্র শতকরা ১৬-১৭℅। অর্থাৎ গত ৩০ বছরে ভিয়েতনাম নিজেদের রপ্তানিযোগ্য শিল্পখাতে বৈচিত্র নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রপ্তানি শিল্পে নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করা খুবই জরুরী।
রিমার্ক এইচ বি লিমিটেডের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স শরীফ মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, প্রতি বছর দেশে প্রায় ১০০০০ কোটি টাকার কসমেটিকস পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। রিমার্কের এই উদ্যোগের ফলে আমদানি নির্ভর এই শিল্পটি একটি রপ্তানিযোগ্য শিল্প খাতে রূপান্তরিত হচ্ছে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় অবদান রাখবে। আমেরিকান টেকনলজির সাহায্যে দেশে উৎপাদিত আন্তর্জাতিক মানের পণ্য, দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হবে সারা বিশ্বে। মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় একশ একর অকৃষিযোগ্য পরিত্যক্ত জমিকে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের উপযোগী করে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেডের কারখানা নির্মাণের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এখানে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী।
এছাড়াও পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করতে সক্ষম হবে প্রতিষ্ঠানটি। এই কারখানায় ৪০টি ব্রান্ডের কালার কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার, হোম কেয়ার ও পারসোনাল কেয়ারের প্রায় চার শতাধিক পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা যায়, কসমেটিকস পণ্যের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং কম্পোন্যান্ট নিয়েও প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। আমদানি নির্ভর কসমেটিকস পণ্যের খাতটিকে একটি রপ্তানিযোগ্য শিল্পখাতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে যাচ্ছে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি হাবে পরিণত হতে যাচ্ছে রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড।
রিমার্ক এইচ বি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, আমরা পরিবেশবান্ধব গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি তৈরীর লক্ষ্যে সব ধরনের মানদণ্ড অব্যাহত রেখে কাজ করে যাচ্ছি। এই লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে যথাযথ ছাড়পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত শিল্পায়ন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা বাস্তবায়ন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা আশা করছি এই মহৎ উদ্যোগটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণসহ বাংলাদেশ সরকার আমাদের পাশে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও রপ্তানী আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় ও দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
এমআই