শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কুরআনের মাস রমযান

শনিবার, এপ্রিল ২, ২০২২
কুরআনের মাস রমযান

ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক:

কুরআনে রমযান মাসের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, রমযান হলো সেই মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। আর কুরআনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, কুরআন হলো মানুষের জন্যে হেদায়াত এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী। এখানে দু’টি বিষয় আছে। প্রথম: রমযান হলো কুরআন নাযিল হওয়ার মাস। 

দ্বিতীয়: কুরআন হলো মানুষের জন্যে হিদায়াত, যা হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। 

এ হিসেবে রমযান হলো কুরআন নাযিল হওয়ার বার্ষিকী। আমরা অনেক ধরনের বার্ষিকী পালন করি। জাতীয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, এ ধরনের অনেক দিবস উদ্যাপন করি, বার্ষিকী পালন করি। আর এসব বার্ষিকী যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, তা পালন করা হয় মাত্র একদিন। কোন বার্ষিকীই একদিনের বেশী পালন করা হয়না। কিন্তু কুরআন নাযিল হওয়ার যে বার্ষিকী, তা পালন করা হয় দীর্ঘ এক মাস ব্যাপী। এটা হলো গোটা বিশ্বে বার্ষিকী পালনের অনন্য ব্যতিক্রম। 

আমরা বিভিন্ন বার্ষিকীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা সভা করি। অনেক ক্ষেত্রেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, আনন্দ ফুর্তি হয়, খাওয়া-দাওয়া হয়, ছুটি থাকে ইত্যাদি। কিন্তু কুরআন নাযিল হওয়ার বার্ষিকী হলো সম্পূর্ণরূপে অন্য ধরনের। এখানে আনন্দ ফুর্তি নেই, কর্মবিরতি নেই, বরং আছে আরো বেশী কাজ। আছে আনন্দ ফুর্তির পরিবর্তে কৃচ্ছতা ও আত্মসংযমের অনুশীলনী। এখানে খাওয়া দাওয়ার পরিবর্তে উপোস করতে হয়। জৈবিক আনন্দের পরিবর্তে সংযমী হতে হয়। এমনকি স্ত্রীর সাথেও যৌনমিলন নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। 

এখন প্রশ্ন, দুনিয়ার অন্যান্য বার্ষিকী উদযাপনের চেয়ে তা এতো ভিন্নরূপ কেন? কুরআন হলো মুসলমানদের জন্যে একটি অতি মূল্যবান দলিল। যে হিদায়াতের জন্য এ কুরআন, তা পাওয়ার একটা শর্ত আছে। কুরআনের বার্ষিকীতে এমন কর্মসূচী দেয়া হয়েছে, যা সে শর্ত পূরণে সাহায্য করে। অর্থ্যাৎ কুরআন থেকে হিদায়াত লাভের জন্যে যা প্রয়োজন, তা অর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এ বার্ষিকী পালন করার মাধ্যমে।

কুরআন মানুষের জন্যে হিদায়াত, দিকনির্দেশনা ও সহজ-সরল পথের রোডম্যাপ হওয়া সত্বেও সবাই সে হিদায়াত লাভ করতে পারবেনা। কুরআন থেকে তারাই উপকৃত হতে পারবে, যাদের মধ্যে তাক্ওয়া আছে। তাক্ওয়া হলো কুরআন থেকে হিদায়াত লাভের জন্যে শর্ত। সেহেতু কুরআনে বলা হয়েছে, এ কুরআন হলো তাকওয়ার অধিকারী মানুষের জন্যে হিদায়াত। 

তাক্ওয়ার অর্থ অনেক ব্যাপক। এর অর্থ আল্লাহভীতি। এর অর্থ এমন সদা-সতর্ক মানসিক অবস্থা, যা মানুষকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষের বিবেককে শক্তিশালী করে ও প্রবৃত্তিকে দমন করে। 

এখন প্রশ্ন, কুরআনের বার্ষিকী রমযানের মাধ্যমে এ তাক্ওয়া কিভাবে সৃষ্টি হয়? এক মাস ব্যাপী রমযানের কর্মসূচী লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এখানে মানুষের জন্যে দু’টি কর্মসূচী আছে, বর্জন ও অর্জন। রমযান মাসে দিনের বেলায় শুধু পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করলেই হয় না, বরং দিন ও রাত উভয় বেলা সকল প্রকার মন্দ কাজ পরিত্যাগ করতে হয়। আত্মসংযমী হতে হয়। দিনে ক্ষুধা আছে, হালাল খাবার আছে, কিন্তু তাও গ্রহণ করা যাবেনা। অর্থ্যাৎ হালাল জিনিসও বর্জন করে সকল প্রকার হারাম জিনিস বর্জনের ট্রেনিং নিতে হয়, আত্মনিয়ন্ত্রণের অনুশীলনী গ্রহণ করতে হয়, যাতে রমযান এবং তার বাইরে কোন মন্দ অথবা খারাপ জিনিস গ্রহণ করার ইচ্ছাও না হয়। 

জৈবিক চাহিদা মেটাবার জন্যে স্বামী-স্ত্রীর মিলন বৈধ। কিন্তু রোযার সময় তা থেকেও বিরত থেকে নিজের প্রবৃত্তি ও পশুত্বের গুণকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুশীলনী চলে, যেন বৈধতার বাইরে কোন অশ্লীলতার প্রতি মানুষের মনে কোন প্রকার কামনাও সৃষ্টি না হয়। 

রাসুল (সা:) বলেছেন, যারা মিথ্যা ও মিথ্যাচার বর্জন করেনা, তাদের এ উপবাসে আল্লাহর  কোন প্রয়োজন নেই। অর্থ্যাৎ মন্দ কাজগুলোকে বর্জন না করলে রোযা আর রোযা থাকেনা। উপবাসে পরিণত হয়। এভাবে রোযা সকল মন্দ কাজ বর্জনের শিক্ষা দেয়, যা তাক্ওয়ার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

অপরদিকে রমযান হলো অর্জনের মাস, কর্মের মাস। রমযানে প্রত্যেক দিন চব্বিশ ঘন্টার কর্মের কর্মসূচী দেয়া হয়েছে। সারাদিন রোযা, সন্ধ্যায় বিলম্ব না করে ইফতার, ইফতারের পরই আছে মাগরিবের নামায। এরপর ক্লান্তিতে সারা শরীর যখন ঝিমিয়ে আসে, তখন ডাক আসে এশার নামাযের। কিন্তু অন্য সময়ের মত কয়েক রাকাত নামায পড়লেই হবেনা। তার চেয়ে আরো বিশ রাকাত বেশি তারাবীর নামায পড়তে হয়। এতকিছুর পরও সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ নেই। আবার ডাক আসে: ওঠো, সেহরী খাও। সেহরীটাও ইবাদত। সেহরী খাওয়ার পর ঘুমাতে গিয়ে ফযরের নামায কা’যা করার সুযোগ নেই। আবার ফযরের নামায পড়া। ফযরের পর থেকে শুরু হয় আবার সারাদিনের রোযা। এর মধ্যেও কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন অধ্যয়ন, বেশি বেশি নামায পড়া, যিকর করা ইত্যাদি কাজে উৎসাহিত করা হয়েছে। 

রাসুল (সা:) হাদীসে কুদসীতে বলেছেন: আল্লাহ ঘোষণা করেছেন: ‘মানুষ যে কোন ভাল কাজ করলে তার সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত দেয়া হয়। কিন্তু রোযা হলো বিশেষ করে আমার জন্যে। তাই আমি নিজ হাতে রোযার প্রতিদান দেব। অথবা আমি নিজেই রোযার প্রতিদান। অর্থাৎ যে রোযা রাখে, সে আল্লাহকেই পেয়ে যায়। আর যে আল্লাহকে পেয়ে যায়, সে সবই পেয়ে গেল। রাসুল (সা:) আরো বলেছেন, কেউ যদি রোযায় নফল কাজ করে, তাহলে ফরয আদায়ের সওয়াব হয়, আর যদি কেউ ফরয আদায় করে, তাহলে অন্য সময়ের সত্তরটি ফরযের সমান পূণ্য হয়। অর্থাৎ যে কোন ভাল কাজ করা হোক, তার সওয়াব কমপক্ষে সত্তর গুণ বেশি। অন্য সময় কেউ যদি সুন্দরভাবে নিষ্ঠার সাথে ভাল কাজ করে, তার সওয়াব সাতশত গুণও হতে পারে। আর রমযানে তা করলে আরো সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। অর্থ্যাৎ যে কোন ভাল কাজ পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে করলে, তার সওয়াব উনপ াশ হাজার গুণ হতে পারে। এভাবে রমযানে বেশি বেশি ভাল কাজ করার উৎসাহ দেয়া হয়েছে। 

রমযানে সকল মন্দ কাজ বর্জন আর ভাল কাজ অর্জনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে তাক্ওয়া সৃষ্টি হয়। আর যার মধ্যে তাক্ওয়া থাকে এবং তাক্ওয়ার সাথে কুরআন অধ্যয়ন করে, তার পক্ষে কুরআন থেকে হিদায়াত পাওয়া এবং তার উপর আমল করা সহজ হয়। এজন্যে বলা হয়েছে, কুরআন থেকে তারাই হিদায়াত পায়, যাদের মধ্যে তাক্ওয়া আছে। 

তাক্ওয়া না থাকলে কুরআন থেকে হিদায়াত পাওয়া সম্ভব নয়। কাজেই দেখা যায়, যারা ইতিবাচক তাক্ওয়া ও সত্য অনুসন্ধ্যানের মানসিকতা নিয়ে কুরআন অধ্যয়ন করে না, তারা তা থেকে হিদায়াত পায় না। পাশ্চাত্যে অনেকেই কুরআন চর্চায় জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো বুদ্ধিবৃত্তিক সাফল্য অর্জন ও পেশাগত উন্নতি। নিজ উদ্দেশ্যে তারা সফল হয়েছে। কিন্তু তাক্ওয়ার অভাবে হিদায়াত পায়নি, যা কুরআনের উদ্দেশ্য।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল