রুহুল সরকার, রাজীবপুর প্রতিনিধি:
রাজীবপুর উপজেলার কোদলাকাটি ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত শংকর মাধবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ এর ভবন নিয়মবহির্ভূত ভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার(৮এপ্রিল) বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ৫ জন সদস্য ও ৬ জন শিক্ষককে অবহিত না করেই প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম নিজের পছন্দের জায়গায় স্কুল ভবন স্থানান্তর করেন।
বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রাজীবপুর থানা এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে।নতুন জায়গায় বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করতে শিক্ষক,সদস্য ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে ব্রম্মপুত্র নদের পূর্ব পাড়ে, শংকর মাধবপুর মৌজায় স্থানান্তরিত করার সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এবং শিক্ষকরা স্কুলের জায়গা নির্ধারণ করে জমি কেনে। জায়গাটি অনুমোদনের জন্য ইউএনও, শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনও করা হয়। তবে জমি স্কুলের নামে রেজিষ্ট্রেশন করতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সময়ক্ষেপন করতে থাকে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নতুন জায়গায় স্কুল ভবন স্থানান্তর করতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কালক্ষেপন করে।
গত ৭ এপ্রিল হঠাৎ করেই প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং তার স্ত্রী ফারজানা খাতুনকে ও কয়েকজন সদস্য নিয়ে জরুরি মিটিং করে রেজুলেশন তৈরি করে। শুক্রবার টিনশেড স্কুল ভবনটি ভেঙে মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ভেলামারী চরে স্থাপন করেন। স্কুল পরিচালনা পর্ষদ এর ১১ জন সদস্যদের মধ্যে ৬ জন ওই রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ফারজানা খাতুন সভাপতি হওয়ার তিনি এককভাবে সিন্ধান্ত গ্রহণ ও রেজুলেশন করে স্কুল ভবন নিজের পছন্দের জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্র ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলো জানা গেছে বিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন শ্রেণীতে ৭৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছে ৭ জন। নতুন এলাকায় স্কুল ভবন নিয়ে যাওয়ার কারনে দুই জায়গায় পাঠদান করা হচ্ছে। ৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জন শিক্ষক পুরাতন ভাঙ্গা ভবনে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। স্থানান্তরিত নতুন জায়গায়ও ঘর তুলে প্রাধান শিক্ষক পাঠদান চালু করেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সোনা মিয়া বলেন, নতুন যে জায়গায় স্কুল নেওয়া হয়েছে সেখানে বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী যেতে চাচ্ছে না। কারন সেখানে নদী পাড় হওয়ায় ঝুঁকি বেশি। এতে স্কুলের শিক্ষার্থী কমে যাবে এবং দূরত্বের কারনে অনেকেই অন্য স্কুলে চলে যাবে।প্রধান শিক্ষক এবং তার স্ত্রী জোরপূর্বক আমাদের সকল সদস্যদের না জানিয়ে স্কুল ভবন ভেঙে নিয়ে গেছে।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক রাসেল মাহমুদ বলেন,আমাদের সকল শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং অভিভাবকদের সাথে কথা ছিল নদের পূর্ব পাড়ে স্কুল ভবন স্থানান্তর করা হবে।আমরা সকলে মিলে জমিও কিনেছি।জমিটি অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনও করা হয়েছে। হঠাৎ করেই হেড স্যার নিজের পছন্দের জায়গায় স্কুল সরিয়ে নিয়ে গেছে আমাদের কাউকে না জানিয়ে। নদীর পশ্চিম পাড়ে স্কুল নেওয়ার অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়বে। দূরত্ব বেশি এবং নদী পারাপারের বিষয় থাকায় শিশু শ্রেণী সহ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবে না।
এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারজানা খাতুন বলেন, স্কুল সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করা হয় নি।প্রাথমিক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সুপারিশ নিয়েই স্কুল ভবন স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে সহসভাপতি সহ ৫ জন এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে নি জানালে তিনি আরও বলেন, তাদের মিটিংয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো তারা অংশগ্রহণ করে নি। নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি হওয়ায় দ্রুত ভবন সরানো হয়েছে। এবং নতুন জায়গায় পাঠদান শুরু করা হয়েছে।
সাহাদৎ হোসেন নামের এক সদস্য বলেন,যে জায়গায় স্কুল ভবন নেওয়া হয়েছে সেই জায়গায় কোন স্কুল নেই। কারও স্বার্থ দেখা হয় নি। স্কুল হওয়াতে ওই এলাকার শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পাবে, তাই সেখানে স্কুলটি স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
মুলুক চান নামের এক অভিভাবক বলেন, নদীর পশ্চিম পাশে স্কুল নিয়ে গেছে। আমি আমার ছেলেকে আর ওই স্কুলে পড়াবো না। পাশের গ্রামের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবো।
প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, স্কুল ভবন সরানোর বিষয়ে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা হয়েছে। মিটিংয়ে দিন তারা উপস্থিত হয় নি।এখন কয়েকজন সদস্য আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছে। স্কুল ভবন সরানোর বিষয়টি সকলকে অবহিত করেই করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
রাজীবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, দুই পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআই